ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহযোগিতায়

শিরিনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সফল গল্প

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২ , ১২:৪৫ পিএম


শিরিনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সফল গল্প

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মেয়ে শিরিন (৪৫) প্রায় ২৫ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। শেকলবন্দি, ঘরে নেই কোনো দরজা-জানালা, পরনে পুরনো ছেঁড়া কাপড়, মাঝেমধ্যে থাকে উলঙ্গ অবস্থায়এমন পরিস্থিতিতে মানুষ যেন তাকে না দেখতে পায় তার জন্য শিরিনকে আড়াল করে রাখা হয় প্লাস্টিক ও পলিব্যাগের বেড়া দিয়ে।  

বিজ্ঞাপন

রাতভর হইচই, চিৎকার চেচাঁমেচি। ঘুম নেই গ্রামবাসীসহ শিরিনের পরিবারের সদস্যদের। তাকে শান্ত করার জন্য প্রায় সময়ই খাওয়ানো হতো ঘুমের ওষুধ। এতে কিছুটা সময় নিস্তার পেত এলাকাবাসী ও শিরিনের পরিবার।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অন্য মেয়েদের মতোই স্বাভাবিক জীবন ছিল শিরিনের। এলাকাবাসী ও তার পরিবারের ভাষ্য, অষ্টম শ্রেণির পর থেকেই শুরু হয় তার জীবনের এই বিপর্যয় ও দুর্গতি। মা-বাবা হারানোর পর শিরিনের ঠাঁই মেলে ছোট ভাই পলাশের সংসারে, সেখান থেকেই শুরু হয় তার বাকি জীবনের পথচলা।    

বিজ্ঞাপন

সাধারণ মেয়েদের মতোই হয়তো শিরিনেরও ছিল স্বপ্ন, আশা এবং প্রত্যাশা কিন্তু সব যেন ধূলোয় মিশে যায় তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে। কী এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল শিরিন, যে কারণে তাকে আজকে এমন জীবন বরণ করে নিতে হয়েছে!

শিরিনকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকদের কাছেও নেওয়া হয়েছে একাধিকবার, কিন্তু এতে কোনো সুফল মেলেনি। পরিবার ও এলাকাবাসী মনে করতে শুরু করেন, শিরিনের ওপর আছে জিন-ভূতের আছর। তাই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝা-কবিরাজের কাছে।  কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

পরিবারের সদস্যরা জানান, অনেকবার চিকিৎসা করানোর পরও ঠিক হয়নি শিরিন। খানিকটা সুস্থ হলেও আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় সে। শিরিনের ছোট ভাই পলাশ তিনবার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করলেও প্রতিবার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। শেষবার দুই বছর থাকলেও প্রতিবারের মতোই আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় শিরিনকে। তারপর আবারও দেখানো হয় কবিরাজ। তাতেও  কোনো লাভ হয়নি মানসিক ভারসাম্যহীন শিরিনের। আর্থিক দুরবস্থা এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ অনেক দামি হওয়ার কারণে শিরিনকে আর চিকিৎসা করাতে পারেনি তার ছোটভাই পলাশ। 

বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান এসব জানার পরও কেন চুপ ছিল, কেন নেয়নি কোনো পদক্ষেপ? স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপে হয়তো শিরিনকে আরও আগেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যেত। 

এরই মাঝে করোনাকালে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে ‘ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মুনিরা ইসলাম খোঁজ পান শিরিনের এবং দেখতে পান তার দুরবস্থা। নির্মম এই পরিস্থিতি দেখে ‘হাত বাড়িয়ে দিলাম’-এর  ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সৈয়দা মুনিরা ইসলাম শিরিনের চিকিৎসার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় উপজেলা বন্দর থানায় যোগাযোগ করে শিরিনকে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসার মাধ্যমে ও দীর্ঘ দেড় মাস নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে শিরিনকে দেখভালের পর কিছুটা সুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শে আবার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে রেখে আসেন। চিকিৎসা পরবর্তী যাবতীয় খরচ ও স্থানীয় ডাক্তারদের সহায়তায় প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখেন তিনি। 

শিরিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দা মুনিরা ইসলামের তত্ত্বাবধানে এবং সরকার ও স্থানীয়দের  সহযোগিতায় তার পৈতৃক ভিটেতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর এই নতুন ঘরেই ঠাঁই হয় শিরিনের। সৈয়দা মুনিরা ইসলামের এমন উদ্যোগে শিরিন ও তার পরিবার অনেক খুশি হন। তারপর ইন্সপিরেশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে কয়েকবার শিরিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয় এবং গত শীতে তাকে শীত বস্ত্র বিতরণ এবং ঈদে পোশাকসহ, মাসিক যাবতীয় ওষুধ ও খরচ প্রদান করেন। 

বর্তমানে শিরিনের অবস্থার আরও অগ্রগতি হয়েছে, সে এখন আর আগের মতো হইচই করে না, কাউকে আক্রমণ করে না এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন।এখন শিরিন প্রতিদিন সকালে নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের বাড়ি বেড়াতে যান, সে এখন অন্যের সঙ্গে কথা বলতে ও গল্প করতে ভালোবাসেন এবং বাড়ির বিভিন্ন কাজে পরিবারকে সহায়তা করেন পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের।

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission