ময়মনসিংহে এক নির্যাতনের শিকার নারীর মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম মাকসুদা আক্তার সুমি। তিনি নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার মুমিনুল ইসলামের মেয়ে।
রোববার (১৩ জুলাই) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগীকে ডেকে আনা হয়েছিল। উনাকে বলা হয়েছে, অভিযোগ দিতে। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোতোয়ালি থানার ওসিকে।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, তার সাবেক স্বামী বোরহান সারওয়ার্দী ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরি করতেন। তিনি বর্তমানে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল তার স্বামী তাকে তালাকের নোটিশ পাঠায়। বিবাহ বিচ্ছেদের আগে তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করতেন বোরহান। সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ানো বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় এমন ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা এলাকার জিন্নাত আরা জলি নামে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর একপর্যায়ে তার সঙ্গেও মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে বোরহানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেন জিন্নাত আরা জলি।
ওই নারী জানান, এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য তালাক হওয়ার পূর্বে বোরহান স্ত্রী সুমির নিকট থেকে জোরপূর্বক দেড় লাখ টাকা নেন। টাকা দেওয়ার পারেও বোরহান আবারও সুমিকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ টাকা দিতে না পারায় প্রতিনিয়ত মারধর ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকেন স্বামী বোরহান। এর একপর্যায়ে বোরহান তার স্ত্রী সুমিকে ৭ এপ্রিল বিবাহ বিচ্ছেদের চিঠি পাঠান। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে ১১ এপ্রিল সুমি প্রতিকার চেয়ে নেত্রকোণার আমলি আদালতে বোরহানকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বোরহান তাকে ডেকে নিয়ে তার মুখমন্ডল লক্ষ্য করে কেমিক্যালজাতীয় পদার্থ ছুড়ে মারেন। পরে সুমি নিজেকে বাঁচাতে মুখে হাত দিলে তার বাম হাত পুড়ে যায়।
পরে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এসব ঘটনায় ৩ জুলাই ভুক্তভোগী মাকসুদা আক্তার সুমি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ অভিযোগটি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারকে খতিয়ে দেখতে বলেন।
এসব বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইডের পরামর্শে ভুক্তভোগী ওই নারী গত ১ জুলাই দুপুর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করতে যান।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম সব হাসপাতালের কাগজপত্র দেখে ও ঘটনা শুনে মামলা করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ওই নারীকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ঘটনার চারদিন পর বিষয়টি জানতে আবারও থানায় গেলে ওসি তাকে জানান, ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক। অনলাইন থেকে মেডিসিন অর্ডার করে প্যাকেট খুলতে গিয়ে আপনার হাত পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা নেওয়া হবে না। বড়জোর একটি অভিযোগ দিয়ে যেতে পারেন, তদন্ত করে দেখতে পারি।
এসব বিষয়ে স্বামী বোরহান জানান, সে আমার স্ত্রী ছিল। এখন তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। সে আদালতে যৌতুকের মামলা দিয়েছে। আদালত রায় দিলে আমি দেনমোহরের টাকা দিয়ে দেবো।
কেমিক্যালজাতীয় পদার্থ নিক্ষেপের বিষয় তিনি বলেন, এটি তার একটি সাজানো নাটক। থানার ওসি সাহেব আমাকে ডেকেছিলেন। আমি তাদেরকে ঘটনাটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। ওসি আমাকে বলেছেন, উল্টো প্রতারণার মামলা দিতে।
ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিবিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তবে ঘটনাটি একজন দারোগাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন আমি তাকে একটি অভিযোগ করতে বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
আরটিভি/এমকে/এস