নবী মুসা (আ.)-এর কাছে ফেরাউনের পরাজয় বিভিন্ন ধর্মে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫ , ০৫:৩৭ পিএম


নবী মুসা (আ.)-এর কাছে ফেরাউনের পরাজয় বিভিন্ন ধর্মে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে
প্রতীকী ছবি

ফেরাউনের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ভীষণ স্বৈরাচারী, চরম দাম্ভিক ও সীমাহীন পাষাণ ছিল সে। ক্ষমতার দম্ভে নিজেকে এক সময় শ্রেষ্ঠ রব বলে ঘোষণা করে! নিজের প্রশংসা ও সম্মান প্রদর্শনে দেশবাসীকে বাধ্য করে। সারা মিসরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে থাকে। মিসরের জনগণকে বহু দল-উপদলে বিভক্ত করে একটি বৈষম্যপূর্ণ সাম্রাজ্যের জন্ম দেয়। নিজের দল ও বংশের লোক কিবতিদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করে। আর অপর দিকে এক সময়কার নবীদের আওলাদ, মিসরের খাদ্যমন্ত্রী হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধরদের পরাধীন করে রাখে। তাদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালায়।

বিজ্ঞাপন

নবী ইসহাক (আ.)-এর প্রথম সন্তান নবী ইয়াকুবের আরেক নাম ছিল ইসরায়েল, তার বংশধরদের বনি ইসরায়েল ডাকা হতো। নবী ইয়াকুবের সন্তান ছিলেন নবী ইউসুফ।

‘ইসরায়েলের সন্তানরা’ নবী ইউসুফ (আ.)-এর সময় থেকেই মিশরে বসবাস করে আসছিলো, যেখানে নবী মুসা (আ.)-এর জন্মের সময় ফেরাউনদের কিবতি বা কপটিক (মিশরীয় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) জাতির শাসন চলে।

বিজ্ঞাপন

যখন নবী মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়, তখন মিশরে বসবাসকারী বনি ইসরায়েলের প্রতিটি ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছিলো।

কোরআনে সূরা আল-কাসাসে বলা হয়েছে, নিশ্চয় ফেরাউন (মিসর) দেশে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল এবং তার অধিবাসীদের নানা দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একদলকে সে দুর্বল করে রেখেছিল। যাদের পুত্রদের সে হত্যা করত আর কন্যাদের বাঁচিয়ে রাখত। নিশ্চয় সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্যতম।

নবী মুসা (আ.)-এর গল্প ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মে একইভাবে বর্ণিত হয়েছে

বিজ্ঞাপন

বাইবেলের ‘এক্সোডাস’ (প্রস্থান) পর্বের বর্ণনা থেকে জানা যায়, বনি ইসরায়েলদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হতো এবং তারা ফেরাউনের জন্য নগর নির্মাণ করেছিলো।

বিজ্ঞাপন

এরপর কিবতি জাতির পক্ষ থেকে ধাত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন বনি ইসরায়েলের ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে শিশুদের জন্মের সাথে সাথে হত্যা করে ফেলে।

ইহুদি শিক্ষা ও ঐতিহ্যের গ্রন্থ, তালমুদে লিপিবদ্ধ আছে, নবী ইউসুফ (আ.)-এর মৃত্যুর একশ বছরের বেশি সময় পরে, নতুন জাতীয়তাবাদী সরকার প্রথমে ইসরায়েলিদের জমি, বাড়িঘর ও সম্পত্তি কেড়ে নেয়।

‘তালমুদ’ ও অন্যান্য ইসরায়েলি গ্রন্থে বলা হয়েছে, ফেরাউনকে এক জ্যোতিষী বলেছিল যে বনি ইসরায়েলের ঘরে জন্ম নেওয়া এক ছেলে তাকে সিংহাসন থেকে উৎখাত করবে।

আর এই বিপদ ঠেকানোর জন্যই ফেরাউন বনি ইসরায়েলের ছেলেদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলো।

বাইবেল ও তালমুদ অনুসারে, মুসার জন্ম হয়েছিল আমরামের (কোরআনে তাকে ইমরান বলা হয়েছে) ঘরে, যিনি নবী ইয়াকুব (আ.)-এর ছেলে লেভির বংশধরদের একজন। নবী মুসা (আ.) জন্মের আগে লেভির ঘরে একজন মেয়ে সন্তান, মরিয়ম এবং একজন ছেলে সন্তান, হারুন ছিল। হারুন সম্ভবত এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন নবজাতক ছেলেদের হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়নি।

কোরআনে বলা হয়েছে, মুসার মাকে ওহী দিয়েছিলাম, এখনই তাকে স্তন্যপান করাও, তারপর যখন তার জীবন নিয়ে বিপদে পড়বে, তখন তাকে নদীতে ফেলে দিও। আর ভয় করো না বা দুঃখ করো না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে সব নবীদের মধ্যে একজন নবী করবো।

বাইবেলে বলা হয়েছে, জন্মের পর তিন মাস পর্যন্ত মুসার মা তাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

কোরআনের ‘সূরা ত্বোহা’-তে বর্ণিত আছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হলো, ‘শিশুটিকে একটি ঝুড়িতে ভরে নদীতে ফেলে দাও।’

বাইবেল ও তালমুদের বর্ণনা অনুযায়ী, ‘মুসার মা খড়কুটো দিয়ে একটি ঝুড়ি তৈরি করেন এবং ভেতরে যাতে পানি ঢুকতে না পারে এজন্য কাদা ও আলকাতরা লেপে দেন। তারপর সেই ঝুড়িতে শিশু মুসাকে শুইয়ে দিয়ে নীল নদে ভাসিয়ে দেন’।

নীল নদ (দরিয়ায়ে নীল) ইসরায়েলিদের বসতিগুলোর পাশ দিয়ে রাজপ্রাসাদের দিকে প্রবাহিত হয়েছিল। এ কারণে নবী মুসা যে ঝুড়িতে ছিলেন, তা রাজা-রানী অথবা তাদের দাস-দাসীদের কেউ দেখে ফেলেন এবং তাকে নদী থেকে তুলে আনেন।

কোরআনে বলা হয়েছে যে, ফেরাউনের স্ত্রী (শিশুটিকে দেখে ফেরাউনকে) বলেছিলেন, ‘এই তো আমার ও তোমার চোখের শান্তি (সন্তুষ্টি)। তোমরা একে হত্যা করো না। কে জানে, হয়তো সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করব।’

বাইবেল ও তালমুদে বলা হয়েছে, যে নারী মুসাকে লালন-পালন করে পুত্র হিসেবে দত্তক পেতে চেয়েছিলেন তিনি ছিলেন ফেরাউনের মেয়ে। কিন্তু কোরআন তাকে ‘ইমরাতু ফেরাউন’ (ফেরাউনের স্ত্রী) বলে সম্বোধন করা হয়।

মুসার মায়ের মন একদম অস্থির হয়ে ওঠে উল্লেখ করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি আমি তার মনকে শক্ত না রাখতাম যাতে সে আমার প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস রাখে, তাহলে সে মনের ভুলে সব গোপন কথা ফাঁস করে দিতো’।

‘আর এই উদ্বেগে সে তার মেয়েকে বলেছিলো, তুমি তার (শিশু মুসা) পেছন পেছন চুপচাপ দেখে এসো। তখন সে (অচেনা রূপে) দূর থেকে দেখছিলো, অথচ ফেরাউনের লোকেরা কিছুই বুঝতে পারলো না।’

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সব দাই-মাদের মুসাকে দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রেখেছিলাম।’

অর্থাৎ, মুসা (আ.) কে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য ফেরাউনের স্ত্রী যাকেই ডাকতেন না কেন, শিশুটি তাদের কারো দুধ পান করতো না।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তখন (মুসার বোন) বলল, তোমরা যদি চাও, আমি এমন এক পরিবারের ঠিকানা বলে দিতে পারি, যারা তাকে তোমাদের জন্য লালন-পালন করবে এবং ভালোভাবে দেখাশোনা করবে, যত্ন নেবে?’

‘এইভাবে আমরা মুসাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যেন তার চোখ ঠান্ডা হয় (সন্তুষ্ট হয়), সে দুঃখ না পায় এবং যেন সে ভালোভাবে বুঝে যায় যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সর্বদা সত্য ও পূর্ণ হয়।’

কোরআনে বলা আছে, ‘একদিন মুসা একজন ইসরায়েলি ও একজন কিবতীর মধ্যে ঝগড়া হতে দেখেন। এ সময় তিনি ভুলবশত এক কিবতিকে ঘুষি মারেন, আর এতে সে মারা যায়। মুসা তৎক্ষণাৎ ক্ষমা চাইলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজ জাতির ওপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করো।’

বাইবেলের বর্ণনা কোরআনের সঙ্গে মিলে যায়।

নিজের জীবন বাঁচাতে, মুসা (আ.) মিশর ছেড়ে মাদইয়ান-এর দিকে চলে যান। কিন্তু তালমুদে মুসার আবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া) পালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মাদইয়ান ছিল ফেরাউনের শাসনের বাইরে নিকটবর্তী একটি স্বাধীন এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকা। আজকাল এই স্থানটিকে বলা হয় ‘আল-বিদ’আত’।

কোরআন অনুযায়ী, মুসা (আ.) মাদইয়ানে পৌঁছে একটি কূপে দুটি মেয়েকে দেখতে পান, যারা নিজেদের পশুদের পানি খাওয়াচ্ছিল। তাদের বাবা ছিলেন বৃদ্ধ। মুসা ওই মেয়েদের সাহায্য করেন।

এরপর একটি মেয়ে তাকে তাদের বাবার কাছে নিয়ে যায়। সেখানে মুসা (আ.) আট বা ১০ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন (মজুরির বিনিময়ে) এবং সেখানেই তার বিয়ে হয়।

বাইবেলের ‘এক্সোডাস’-এ বলা হয়েছে, মুসা মাদইয়ানে গেলেন, কূপে মেয়েদেরকে রাখালদের হাত থেকে রক্ষা করলেন। মেয়েরা তাকে তাদের বাবা ‘রাউইল’ বা ‘যেথ্রো’-এর কাছে নিয়ে যায়।

তিনি মুসা (আ.) কে বাড়িতে ডাকেন এবং ‘সিপ্পোরা’ বা ‘সাফোরা’ নামের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে মুসার কাজ বা মজুরি দেয়ার বিষয়টি বলা হয়নি।

আল্লাহর সাথে কথোপকথন

কোরআনে বলা আছে যে, যখন মুসার কাজের মেয়াদ পূর্ণ হয়, তখন তিনি নিজের পরিবারের সাথে মাদইয়ান ত্যাগ করেন এবং এই যাত্রায় তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথন করেন এবং তাকে নবুওয়াতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ তিনি নবী হন।

অতঃপর যখন মুসা সেখানে পৌঁছালেন, তখন সেই বরকতময় অঞ্চলের আয়মান উপত্যকার প্রান্তে একটি গাছ থেকে আওয়াজ এলো, ‘হে মুসা, আমি আল্লাহ, বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’

এবং আরও বলা হলো, ‘আর, তোমার লাঠিটা (মাটিতে) নামিয়ে রাখো।’

তারপর যখন মুসা দেখলেন যে লাঠিটি কিলবিল করছে যেন এটা একটা সাপ, তখন তিনি পেছন ফিরে দৌড়ে পালিয়ে যান এবং পেছনে ফিরে তাকান না।

আল্লাহ বললেন, ‘হে মুসা! সামনে এগিয়ে এসো, ভয় পেও না। তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তোমার হাত তোমার বুকে রাখো, তাহলে তা থেকে উজ্জ্বল সাদা আলো বেরিয়ে আসবে কোনোরূপ ত্রুটি ছাড়া এবং এজন্য, তোমার বাহু নিজের দিকে চেপে ধরো, যেমন কেউ ভয়ে চেপে ধরে। অতএব, এগুলো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ফেরাউন এবং তার আমলাদের প্রতি দুটি নিদর্শন। সত্য কথা হলো, তারা খুবই অবাধ্য জাতি।’

এরপর বলা হলো, ‘ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে।’

বাইবেলের (বুক অব এক্সোডাস) বিবরণ অনুযায়ী, মুসা যখন তার শ্বশুরের ভেড়ার পাল চড়াচ্ছিলেন, তখন তিনি মরুভূমির আরেক প্রান্তে পৌঁছে যান। ঈশ্বরের পাহাড় হোরেব-এর কাছে চলে যান। সেখানেই আল্লাহ তার সাথে কথা বলেন এবং তাকে নবীর দায়িত্ব দেন। সেইসাথে তাকে মিশরে যাওয়ারও নির্দেশ দেন।

তারপর নবী মুসা তার শ্বশুরের কাছে ফিরে যান এবং তার অনুমতি নিয়ে নিজ সন্তানদের নিয়ে মিশরের উদ্দেশে রওনা হন।

বাইবেল ও তালমুদ দুটোতেই বলা আছে, পূর্ববর্তী ফেরাউনের মৃত্যুর পর, মিশরে এক নতুন ফেরাউন শাসন করছিলেন।

কোরআনে বলা আছে, অতঃপর যখন মুসা (আ.) আমার স্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে ফেরাউনের কাছে গেলো, তখন তারা বললো, এটা তো জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়, এবং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছেও এমন কথা কখনো শুনিনি।

দরবারের লোকেদের ফেরাউন বললো, আমি তোমাদের জন্য আমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্যকে জানি না।

প্রধানমন্ত্রী সে বললো, তুমি আমার জন্য পাকা মাটির ইট দিয়ে একটি উঁচু দালান তৈরি করো, যাতে আমি মুসার ঈশ্বরের দিকে তাকাতে পারি। তবে আমি তো ওকে একজন মিথ্যাবাদী মনে করি।

অর্থাৎ ফেরাউন নিজেকে নিজে ঈশ্বর বলে দাবি করেন এবং মুসা (আ.) কে মিথ্যাবাদী।

‘ফেরাউন এবং তার বাহিনী পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করেছিলো এবং তারা মনে করেছিল যে, তারা আমার দিকে কখনো ফিরে আসবে না।’

ফেরাউনের সলিল সমাধি

যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে গামদি সেন্টার অব ইসলামিক লার্নিং-এর গবেষক নাইম বালুচের মতে, বাইবেল (ওল্ড টেস্টামেন্ট) ও তালমুদের মধ্যে নবী মুসার কাহিনী ধারাবাহিকভাবে অর্থাৎ ঘটনার সময়ক্রম অনুযায়ী বর্ণিত হয়েছে।

কিন্তু কোরআনে এই কাহিনী সুরা কাসাস, সুরা আরাফ, সুরা ত্বোহা, সুরা শুআরা, ও সুরা যুখরুফ-এ বর্ণিত হয়েছে। যা ধারাবাহিক না হলেও নবী মুহাম্মদ (সা.) দাওয়াতের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ের ঘটনা হিসেবে এসেছে।

তিনি বলেন, মোটা দাগে কোরআন ও বাইবেলের কাহিনীর মধ্যে মূল বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই— তবে বিস্তারিত বর্ণনায় কিছু ভিন্নতা আছে।

এই পুরো কাহিনীর সারসংক্ষেপ করলে দেখা যায়, নবী মুসা (আ.) বহু বছর মাদইয়ানে কাটানোর পর, তুর পাহাড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন এবং নবুওয়াত প্রাপ্ত হন অর্থাৎ নবী হিসেবে মনোনীত হন।

তখন তাকে মিশরে গিয়ে ফেরাউনের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতে এবং বনি ইসরায়েলদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।

কোরআন ও বাইবেল- দুই জায়গাতেই বলা আছে, নবী মুসা (আ.), তার ভাই হারুনকে নিয়ে ফেরাউনের দরবারে যান।

বাইবেলের এক্সোডাস নামক অধ্যায়ে ফেরাউন এবং নবী মুসা (আ.)-এর মধ্যে কথোপকথন অনেকটা এরকম, প্রভু, যিনি হিব্রুদের ঈশ্বর, তিনি বলেছেন, আমার লোকদের ছেড়ে দাও, যাতে তারা মরুভূমিতে গিয়ে আমার ইবাদত করতে পারে।

ফেরাউন বলে, আমি প্রভুকে চিনি না এবং আমি ইসরায়েলের সন্তানদেরও যেতে দেব না।

এই বক্তব্যের অনুরূপ কোরআনের সূরা কাসাসেও বর্ণিত আছে।

নবী মুসা (আ.) ও হারুন আল্লাহর নির্দেশে অনেক মু’জিজা (অলৌকিক ঘটনা) দেখান, যেমন- লাঠিকে সাপে রূপান্তরিত করা, হাত আলোকিত হয়ে যাওয়া এবং মিশরের ওপর বিভিন্ন মহামারির আক্রমণ যেমন রক্ত, ব্যাঙ, উকুন, মাছির ঝাঁক, গবাদি পশুর মৃত্যু, ফোঁড়া, শিলাবৃষ্টি, পঙ্গপাল, অন্ধকার এবং অবশেষে প্রথম সন্তানদের মৃত্যু।

কোরআনের সূরা আল-আ’রাফের ১৩১ থেকে ১৩৬ আয়াতে এই বিপর্যয়গুলোর কথা সংক্ষেপে বলা আছে।

তবে, বাইবেলে বলা হয়েছে যে যখন প্রথম সন্তানের মৃত্যুর মহামারি আসার পর, ফেরাউন ভয় পেয়ে যান। ফেরাউন নবী মুসাকে বলেন, মুসা যেন তার জাতির লোকদের নিয়ে মিশর ছেড়ে চলে যায়।

কোরআন অনুসারে, ফেরাউন এবং তার লোকেরা বনি ইসরায়েলদের এবং মুসা (আ.) কে রেহাই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেন তাদের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এরপর নবী মুসা (আ.) বনি ইসরায়েলদের নিয়ে মিশর ত্যাগ করে মরুভূমির দিকে রওনা হন।

এরপর বাইবেল এবং অন্যান্য ব্যাখ্যাকারীরা বলেন, কিছু সময় পরে ফেরাউন তার আগের সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত হয় এবং সেনাবাহিনী নিয়ে নবী মুসা ও ইসরায়েলিদের পেছনে ধাওয়া করেন।

বাইবেল অনুযায়ী তারা লোহিত সাগরের তীরে পৌঁছালে নবী মুসা আল্লাহর আদেশে লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করেন, এবং সমুদ্র চিড়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। বনি ইসরায়েল শুকনো মাটির ওপর দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যান। কোরআনেও একই ঘটনা বলা হয়েছে।

ফেরাউন ও তার সৈন্যরাও তাদের পেছনে পেছনে সমুদ্রে প্রবেশ করে, কিন্তু বনি ইসরায়েলরা সমুদ্র পার হওয়ার পর সমুদ্র এক হয়ে যায় এবং সেখানে আবার পানি ফিরে আসে। এতে ফেরাউন ও তার সমস্ত সেনাবাহিনী ডুবে যায়।

বাইবেলের এক্সোডাসে বলা হয়েছে, পানি ফিরে এসে ফেরাউনের সব সৈন্য, তাদের রথ ও ঘোড়সওয়ারদের ডুবিয়ে দেয়। তাদের একজনও রক্ষা পায়নি।

তালমুদে এই ঘটনাটি আরও বিশদভাবে বর্ণিত আছে। কোরআনে বলা হয়েছে যে, সমুদ্রে একটি পথ তৈরি হয়েছিল এবং ফেরাউন তাতে ডুবে যায়।

কোরআনের সুরা কাসাসে বলা হয়েছে, অবশেষে আমি তাকে (ফেরাউনকে) এবং তার বাহিনীকে ধরলাম, এবং তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম, সুতরাং দেখো জালিমদের পরিণাম কী হয়েছে!’

এবং আল্লাহ তার মরদেহ সংরক্ষণ করেছেন। কোরআনের সুরা ইউনুসে বলা হয়েছে, ‘(হে ফেরাউন!) আজ আমি তোমার প্রাণহীন দেহ সংরক্ষণ করবো, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী জাতির জন্য একটি নিদর্শন (সতর্কীকরণের) হয়ে থাকতে পারো।’

আরটিভি/একে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission