বিবেক জাগান

ব্যারিস্টার আবু সায়েম

শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ , ০৬:৪৮ পিএম


বিবেক জাগান
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়ের দাবি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো ক্রমেই অনাকাঙ্ক্ষিত কোলাহলে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে মূলধারার মিডিয়া পর্যন্ত—সর্বত্র যেন ব্যক্তি আক্রমণ, কটুক্তি আর বিদ্বেষের জয়জয়কার। এ বাস্তবতায় যখন কেউ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ভর প্রশ্ন তোলে, তখন তা গা বাঁচানো বিদ্রূপ কিংবা অবজ্ঞার ঢেউয়ে ডুবে যায়।

বিজ্ঞাপন

আমরা ভুলে যাচ্ছি, রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য শুধু অর্থনীতির সূচকে মাপা যায় না, তা মাপা হয় ন্যায়বিচার, নাগরিক মর্যাদা ও মানবিক নিরাপত্তার মানদণ্ডে। সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নিপীড়ন—এসব অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। অথচ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা কিংবা অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রায় অকার্যকর। 

এ প্রেক্ষাপটেই আমি বলতে চাই, “তারেক রহমানকে নিয়ে নোংরামো বাদ দিয়ে ১১ মাসে সংঘটিত রেকর্ডসংখ্যক খুন-ধর্ষণের ন্যায়বিচার কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, ভাবুন।

বিজ্ঞাপন

দেশে নৃশংস অপরাধ বাড়ছে, সরকার অপরাধ ঠেকাতে পারছে না—আপনারা যারা বিএনপিকে তুলোধোনা করছেন—এ নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করুন, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিরীক্ষণ করুন, সবার সাথে কথা বলুন। মানবাধিকার সুরক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের, এটা মাথায় নিয়ে আন্তরিকতার সাথে ও সরল বিশ্বাসে কাজ করুন। খালি খালি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত করবেন না। জানেন তো, ব্লেইম গেইম ন্যায় প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

তারেক রহমানকে গালি দিয়ে আপনি হয়তো বিকৃত সুখ লাভ করবেন, কিন্তু বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। আর যদি মনে করেন, দেশ গোল্লায় যাচ্ছে যাক, আপনি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করবেন, তাহলে প্রকৃতি আবারও প্রতিশোধ নেবে। হাসিনা পালিয়েছে, আমরাও বাঁচব না।

সময় থাকলে তারেক রহমান কী বলেছেন, মন দিয়ে পড়ুন—রাষ্ট্রে যদি আইনের শাসন না থাকে, আপনি, আমি, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু—কেউ আমরা নিরাপদ নই।

বিজ্ঞাপন

বুঝতে পারলে আপনি, আমি, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু—সবাই আমরা নিরাপদ থাকব। না বুঝতে পারলে বা বুঝেও না বোঝার ভান করলে, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে রাত পোহানোর আগে। কেঁদে কেটেও তখন কেউ পার পাব না। সময় থাকতে তাই বিবেক জাগান।

বিজ্ঞাপন

আমার এ কথাগুলো কোনো প্রতিপক্ষকে হেয় করার জন্য নয়, বরং একটি আন্তরিক ও নীতিনিষ্ঠ আহ্বান—আমরা যেন বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হই এবং সত্যকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজি। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা সবাই কি এক হতে পারি না?

আজ তারেক রহমানকে টার্গেট করে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেগুলোর ভাষা, ভঙ্গি ও কৌশল সবই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ব্যাহত করে। একজন রাজনৈতিক নেতাকে ব‍্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে, কল্পিত অপবাদ দিয়ে তাকে হেয় করে আসলে কাদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে?

এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের নিজেদের মধ্যেই খুঁজতে হবে।

রাষ্ট্র যদি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করে, যদি প্রশ্ন তোলাকে দেশদ্রোহিতা আর সমালোচনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়—তাহলে সেটি আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, বরং একটি শোষণমূলক নিয়ন্ত্রিত কাঠামোতে রুপ নেয়। আমরা কি সেদিকেই হাঁটছি?

আজ যারা অন্যের গায়ে কাদা ছিটিয়ে আত্মতৃপ্ত হচ্ছেন, কাল হয়তো তারাও সেই একই শোষণের শিকার হবেন। ইতিহাস এ কথা বহুবার প্রমাণ করেছে, ফ্যাসিবাদ যখন ফিরে আসে, সে কারও কথা শোনে না, কাউকে ছাড় দেয় না।

তাই সময় থাকতে আসুন, আমরা বিবেক জাগাই। রাজনীতিকে শত্রুতা নয়, দায়িত্ব ও নৈতিকতার জায়গা থেকে দেখি।
মানবাধিকারের প্রশ্নে দলীয় নয়, মানবিক ও জাতীয় অবস্থান নিই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যম, সবাই একসাথে কাজ করি। 

তাহলেই আমরা একটি নিরাপদ, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে পারি।

গালাগাল নয়, গঠনমূলক সমালোচনা করুন। প্রচার নয়, প্রশ্ন করুন।ব্লেইম গেইম নয়, সমাধান ভাবুন। আর দেরি নয়, বিবেক জাগান।

লেখক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ও সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission