স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে নির্মাতাদের অভিযোগ

বিনোদন ডেস্ক, আরটিভি

বুধবার, ০১ মে ২০২৪ , ০৭:১৭ পিএম


স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে নির্মাতাদের অভিযোগ

একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় নির্মাতা ও প্রযোজকদের। সিনেমা নির্মাণের শেষে সেই চ্যালেঞ্জ আরও বড় আকারে দেখা দেয় কেননা সিনেমা প্রদর্শন নিয়ে নানা সময়ই নানা বাধা-বিপত্তিতে পড়তে হয় তাদের। প্রদর্শনের জন্য সঠিক হল বা শো না পেলে অকালমৃত্যু ঘটে অনেক নতুন চলচ্চিত্রের। মহান মে দিবসে (১ মে) ছবি প্রদর্শন নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ঈদে মুক্তি পাওয়া তিন ছবির নির্মাতা ।  

বিজ্ঞাপন

গত ঈদে ১১টি ছবির মধ্যে ৫ ছবির ফলাফল বেশ ভালো।  ঈদের তিন সপ্তাহ পরেও নির্মাতদের মুখে সেই শান্তির হাসি লক্ষনীয়। এমন সময়ে গত ঈদের অন্যতম সফল তিন সিনেমার (রাজকুমার, দেয়ালের দেশ ও কাজলরেখা) নির্মাতার পক্ষ থেকে উঠেছে কারণ ছাড়াই ‘হাউজফুল’ ছবি নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়ায় একটাই অভিযোগ- ৩ মে থেকে দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স ঈদের সবগুলো সিনেমা নামিয়ে দিচ্ছে তাদের শো-সিডিউল থেকে। বিনিময়ে তুলছে বিদেশি ছবি। প্রমাণপত্র হিসেবে প্রত্যেকেই দিয়েছেন ১ মে’র অনলাইন টিকিটের প্রায় ‘হাউজফুল’ স্ক্রিনশট।

‘রাজকুমার’ নির্মাতা হিমেল আশরাফ বুধবার (১ মে)  দুপুরে এ প্রসঙ্গে বলেন, ঠিক গত সপ্তাহে টিকিট বিক্রিতে ১ নাম্বারে ছিল যেই সিনেমা, সেই সিনেমার কোনও শো পরের সপ্তাহে নেই, ১টা শো-ও না!  ঈদের সবগুলো বাংলা সিনেমা উধাও হয়ে গেল! প্রতিদিন ৫০টার ওপরে শো স্টার সিনেপ্লেক্সের। এর মধ্যে ১টা শো পাওয়ার যোগ্যতা নেই ঈদের কোনও সিনেমার? অথচ আজকে সন্ধ্যার ‘রাজকুমার’ ও ‘কাজলরেখা’র শোর টিকিট অনলাইনে চেক করে দেখেন, ৬০% অলরেডি সোল্ড আউট। এখনও ৪ ঘণ্টা বাকী! আমি আজকে সন্ধ্যার শো স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে রাজকুমারের ৮৫% টিকিট সোল্ড আউট। 

বিজ্ঞাপন

আগামী শুক্রবার (৩ মে) থেকে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে ৬টা বিদেশি সিনেমা চলবে, যেখানে বাংলা সিনেমা চলবে ১টা। ১৬টা শো বিদেশী সিনেমার, ৪টা শো বাংলা সিনেমার! বাংলাদেশের সিনেমা হল, বাংলাদেশের মানুষই দর্শক, বাংলা সিনেমার দর্শক থাকার পরেও বাংলা সিনেমা নাই! এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পথ বাকি, অনেক...।

একইভাবে নিজ নিজ ছবির আজকের (১ মে) টিকিট বিক্রির উদাহরণ টেনে কাছাকাছি প্রতিক্রিয়া বা হতাশা ব্যক্ত করেছেন ‘কাজলরেখা’র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম এবং ‘দেয়ালের দেশ’ নির্মাতা মিশুক মনি।

বিজ্ঞাপন

নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম  তার ফেসবুকে লিখেন, বসুন্ধরায় আজকের ৪ ৩০ এর  শো। তারপর ও আগামী শুক্রবার থেকে বিদেশি ছবির জন্য কাজলরেখা র কোন শো নাই। কেন? ঈদের অন্য সিনেমা গুলো ও নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্তত ৪০% শো বরাদ্দ দেশি সিনেমার জন্য রাখার অনুরোধ করছি।

বিজ্ঞাপন

ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে  ‘দেয়ালের দেশ’ নির্মাতা মিশুক মনি বলেন, বাংলা সিনেমার বিপ্লব ঘটানো নিয়ে অনেক বড় বড় বুলি আওড়াতে দেখি অনেক হল ব্যবসায়ীদের। সেই বিপ্লব ঘটাতে বিদেশী সিনেমার আমদানী শুরু হয়। ব্যবসাও ভাল চলে কিন্তু হলের আর উন্নতি হয়না। ভাঙ্গা সীট বদলে ভাল সীট, ফ্যান, পর্দা ও সাউন্ড সিস্টেমের কিছুরই পরিবর্তন হয়না। আর সিনেপ্লেক্স থেকে একটা টিকেটের কয় ভাগের কত টাকা প্রযোজক পান সেই হিসাব করে কেন কখনও কেউ কথা বলেনি আমি সেটা ভেবেই অবাক হই। যে হারে ভাগ হয় তাতে খুব ভাল চললেও একশো সিনেমার মধ্যে ১/২ টা ছাড়া বাকি সিনেমার টাকা হল থেকে ওঠা সম্ভব না। আজকের সীমান্ত সম্ভার ০৪:৪০ এর Deyaler Desh- দেয়ালের দেশ এর শো'র অগ্রিম টিকিট সেল। রিলিজের পর থেকে দেয়ালের দেশ নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও প্রশংসা পুরোটাই অর্গানিক ছিল। সাধারণত বসুন্ধরা শাখায় সবচেয়ে বেশী সেল হয় তবুও গত সপ্তাহে বসুন্ধরা শাখা থেকে কোন অজানা কারণে দেয়ালের দেশ এর শো বন্ধ করা হয়। অদ্ভুত মজার ব্যাপার হচ্ছে সিনেপ্লেক্সের ওয়েব সাইটে সেল রিপোর্ট দেখা যায়, এবং সেখানে রোজ দেখা যাচ্ছিল গত সপ্তাহে দেয়ালের দেশ একাধিক সিনেমার চেয়ে শো কম নিয়েও সেল বেশী। তবুও কি জাদুবলে উইকলি সেল রিপোর্ট তারা পাবলিসড করে সেখানে দেয়ালের দেশকে সেই সকল সিনেমার পেছনে ফেলে যে সিনেমার সেল দেয়ালের দেশ এর চেয়ে কম। 

তিনি আরও বলেন, আজকে বসুন্ধরা শাখায় কাজলরেখার শো হাউজফুল তবুও পরবর্তী সপ্তাহ থেকে রাজকুমার, দেয়ালের দেশ, কাজলরেখা, ওমর সহ অন্য সিনেমার শো বন্ধ করে দেন স্টার সিনেপ্লেক্সে। অবস্থাটা এখন এরকম, আমার গরু আমি ঘাস খাওয়াবো নাকি লাঠি চার্জ করবো আমার মর্জি! সিনেমা নিয়ে এত বড় বড় বক্তব্য আপনারা যারা দেন তা স্রেফ ভন্ডামী। ব্যবসাটাই এখানে মুখ্য। বিশ্বকাপ নিয়ে নির্মিত যে চলচ্চিত্র আমদানী করে আনা হলো এবং প্রথম দিনের পরে তার সেল রিপোর্ট দেখেন এবং তৃতীয় সপ্তাহে এসে বাংলা সিনেমার সেল রিপোর্ট দেখেন তাহলে দেখবেন তৃতীয় সপ্তাহে এসেও বাংলা সিনেমা শো সংখ্যা কম নিয়েও নতুন সিনেমার চেয়ে সেল রিপোর্ট বেশী আছে। ঈদের সিনেমা হিসেবে সেল রিপোর্ট এতটাও খারাপ ছিল না যে সবগুলো শো বন্ধ করে দিতে হবে। মিনিমাম শো রাখার যৌক্তিকতা ছিল।  এই মুল্লুকে বাংলা সিনেমার কখনও জয় হয়নি আর আপনারা কথা বলতে না শিখলে কখনও জয় হবেও না। বাংলা সিনেমার কফিনের লাস্ট পেরেক মারতে বাকি। শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা। 

এমন প্রশ্ন কিংবা অভিযোগের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমত আমরাও বাংলাদেশী। এই প্রতিষ্ঠান বিদেশি নয়। এই প্রতিষ্ঠান নিজেরাও বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করে। দেশের প্রতিটি সিনেমার প্রতি আমাদের আন্তরিকতা ও সততা রয়েছে সবসময়। দেশের প্রতিটি নির্মাতা-প্রযোজকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও আগ্রহ বরাবরই বেশি। অথচ আজ মে দিবসে যে অভিযোগটি উঠলো স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে, সেটি তুলতে আমরা কেউ একটিবারও ভাবিনি। এটাই আসলে খারাপ লাগার বিষয়। 

টানা তিন সপ্তাহ কেন, ছয় সপ্তাহ চালানোর পরেও যদি কোনও সিনেমার দর্শক থাকে, সেটি নামিয়ে দিলে আপত্তি বা অভিযোগ উঠবেই। সেই অভিযোগটাই তুলেছেন নির্মাতারা। কেন নামাতে হচ্ছে ছবিগুলো? এমন প্রশ্নের জবাবে মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রথমে আমি একটু কারেকশন করছি। নতুন সপ্তাহে (৩ মে) আমাদের দুটি নতুন বাংলা সিনেমা উঠছে। একটি ‘শ্যামাকাব্য’ অন্যটি ‘ডেড বডি’। তারমানে বিষয়টি এমন নয়, বাংলা সব ছবি নামিয়ে দিয়ে আমরা সব বিদেশি ছবি তুলছি। আবার এটাও সত্যি, গ্লোবাল সিনেমা চালাতে গেলে বাইরের ছবিগুলোকেও আমাদের নির্দিষ্ট শো দিতে হয়। খেয়াল করবেন, ঈদের তিন/চারদিন আগে আমরা বলিউডের ‘ক্রু’ এনেছি। সেটি ঈদের বাংলা সিনেমার স্বার্থে কিন্তু নামিয়ে ফেলেছি চাঁদরাতেই। এগুলো আসলে এভাবে বলার কথা না আমার। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতিটাও তো আপনাদের বুঝতে হবে। সব বাদ দিন, ‘রাজকুমার’, ‘ওমর’, ‘কাজল রেখা’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘লিপস্টিক’ সিনেমাগুলো যদি দর্শক দেখে, সেগুলো নামিয়ে দিলে আমাদের লাভটা কোথায়? হল খালি রাখলে আমাদের কেউ টাকা দেয়? আমরা তো ভাই, দর্শকদের জন্য একটা ছবি চালাই, শো বাড়াই আবার কমাই। ফলে ওনারা কেন মনে করছেন, সিনেমা চলার পরেও আমরা নামিয়ে দিচ্ছি জোর করে? এটা কোনও যুক্তির মধ্যে পড়ে! আমাদের প্রতি তাদের এমন ঠুনকো বিশ্বাস! এই প্রতিদান? বাংলা সিনেমায় স্টার সিনেপ্লেক্সের কোনও অবদান নাই? আমরা এর আগে ‘দেবী’, ‘আয়নাবাজি’, ‘প্রিয়তমা’, ‘পরাণ’, ‘সুড়ঙ্গ’ মাসের পর মাস চালাইনি? শো চালানো মানেই তো আমাদের লাভ।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission