সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করছেন অথচ চোখে পড়েনি, এমন ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া ভার। কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের পোস্ট, যেখানে লেখা, ‘আমি এই মর্মে ঘোষণা করছি, আমি ফেসবুক বা মেটাকে আমার কোনো ছবি ব্যবহারের অনুমতি দিইনি।’ অনেকে নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করছেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে, আবার কেউ বা করছেন নিতান্তই সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে।
তবে প্রশ্ন হলো, এই পোস্ট কতটা সত্য বা কার্যকরী? ব্যবহারকারীরা কি সত্যিই ফেসবুক বা মেটার কনটেন্ট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন এমন একটি পোস্ট দিয়ে?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পোস্ট আসলে একটি দীর্ঘদিনের ভুল ধারণার ফসল। এর কোনো আইনি বা বাস্তব ভিত্তি নেই।
আইনি ভিত্তি নেই এই ঘোষণার
প্রযুক্তি বিশ্লেষক মাহবুব হোসেন ফয়সাল বলেন, “এই ধরনের ঘোষণার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। আপনি যখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে একাউন্ট খোলেন, তখনই তাদের টার্মস অব সার্ভিস মেনে নেন। সেই চুক্তিতেই বলা আছে—আপনার কনটেন্ট কীভাবে ব্যবহার করা হবে।”
তিনি আরও জানান, এ ধরনের পোস্ট শেয়ার করে কোনোভাবেই ফেসবুকের শর্তাবলি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। বরং এটি বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অন্য ব্যবহারকারীদের মধ্যেও ভুল ধারণা তৈরি করে।
পোস্টটি আসলে কোথা থেকে এল?
এমন ধাঁচের পোস্ট নতুন নয়। ২০১2 সাল থেকে শুরু করে প্রায় প্রতি বছরই এটি কোনো না কোনো রূপে ভাইরাল হয়। বিশেষ করে যখন ফেসবুক বা মেটা তাদের প্রাইভেসি নীতিতে কোনো আপডেট আনে, তখনই নতুন করে এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
পোস্টে সাধারণত লেখা থাকে—“এই মর্মে ঘোষণা করছি যে আমি মেটা/ফেসবুক/ইনস্টাগ্রামকে আমার ছবি, ভিডিও বা পোস্ট ব্যবহারের অনুমতি দিইনি। এই ঘোষণার মাধ্যমে আমি কনটেন্টের মালিকানা বজায় রাখছি।”
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পোস্ট শেয়ারে বাস্তবে কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যবহারকারীরা তাদের কনটেন্টের মালিক থাকেন। তবে তারা যখন কোনো কনটেন্ট আপলোড করেন, তখন ফেসবুককে সেটি দেখানো বা শেয়ার করার একটি লাইসেন্স দেন।
ব্যবহারকারী চাইলে যেকোনো সময় সেই কনটেন্ট ডিলিট করে এই অনুমতি প্রত্যাহার করতে পারেন।
ভুল পোস্ট শেয়ার করলে কী হয়?
সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, “অনেকেই টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস না পড়েই ফেসবুক ব্যবহার শুরু করেন। পরে ভুল তথ্য শুনে এমন গুজব পোস্ট শেয়ার করতে থাকেন। অথচ এই পোস্ট প্রতি বছরই একবার করে ভাইরাল হয়।”
তিনি বলেন, “এগুলো কোনো কার্যকর ঘোষণা নয়, বরং স্প্যাম। সচেতন ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের উচিত এগুলো শেয়ার না করা ও অন্যদেরও সচেতন করা।”
তাহলে করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য সুরক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো—সঠিক প্রাইভেসি সেটিংস ব্যবহার করা। এজন্য ফেসবুকের Privacy & Settings ও Profile & Tagging মেনু থেকে কাস্টমাইজ করা যেতে পারে—
. কারা আপনার পোস্ট দেখতে পারবে (Friends, Public, Only Me)।
. কে আপনাকে ট্যাগ করতে পারবে।
. আপনি চাইলে ফেস রিকগনিশন বা লোকেশন শেয়ারের অনুমতিও বন্ধ করতে পারেন।
ভাইরাল হওয়া এই ‘ঘোষণা’ পোস্ট আসলে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। এতে কোনো প্রাইভেসি রক্ষা হয় না বরং ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সচেতন ব্যবহারকারীদের উচিত—বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া এমন কোনো পোস্ট শেয়ার না করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়িত্বশীল আচরণ করা।
আরটিভি/এসকে