বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বখ্যাত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক যাত্রা শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে প্রতিষ্ঠানটির এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে বাংলাদেশের মতো জনবহুল এবং ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে স্টারলিংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। দেশে এখনও অনেক এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড সংযোগ নেই। বিশেষ করে চর, পাহাড় এবং দুর্গম গ্রামগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধার অভাব রয়েছে। স্টারলিংক এই সমস্যা দূর করতে পারে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ পৌঁছে দিতে সহায়তা করতে পারে।
স্টারলিংক হল স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে। এই সেবা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করা ভূস্থির (geostationary) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চালিত হয়। স্টারলিংকের সেবা বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে রয়েছে।
বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালু হওয়ার পর, দুর্গম এলাকার মানুষও সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পেতে পারবেন। এটি ফ্রিল্যান্সিং এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য কাজের জন্য উপকারী হবে। সাধারণত স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের জন্য কেবল একটি অ্যান্টেনা সেটআপ করতে হয়, যা পৃথিবী থেকে কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
স্টারলিংকের সেবা পেতে গ্রাহকদের কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে, যেমন: রিসিভার, অ্যান্টেনা, রাউটার, এবং পাওয়ার সাপ্লাই। এই সরঞ্জামগুলোর জন্য স্টারলিংক কিটের মূল্য ৩৪৯ ডলার থেকে ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৪৩ হাজার টাকা থেকে ৭৪ হাজার টাকা) পর্যন্ত হতে পারে।
মাসিক ফি হিসেবে স্টারলিংক গ্রাহকদের ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা) প্রদান করতে হবে। তবে কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য এই খরচ আরও বেশি হতে পারে।
স্টারলিংক সেবা পেতে গ্রাহকদের টেলিভিশনের অ্যান্টেনার মতো একটি ডিভাইস ইনস্টল করতে হবে। এই ডিভাইসটি পৃথিবী থেকে কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং গ্রাহক তার রাউটারটি ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করেন। স্টারলিংকের ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২৮ এমবিপিএস হতে পারে, তবে সাধারণত অধিকাংশ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান।
পাওয়া যাবে যেসব সুবিধা—
দুর্গম এলাকায় সেবা: গ্রামাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যাবে, যা ফ্রিল্যান্সিং এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্যোগকালীন সুবিধা: স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা দুর্যোগকালীন সময়ে দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
গোপনীয়তা রক্ষা: স্টারলিংক সেবা আড়িপাতার সুযোগ না দেওয়ার কারণে, এটি গোপনীয়তার সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সাহায্য করতে পারে।
এর আগে, বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালু হতে ২০২৪ সালে একটি বৈঠক হয়েছিল, যেখানে টেলিযোগাযোগ খাতে আড়িপাতার জন্য সরকারের প্রবেশাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হয়। স্টারলিংক সাধারণত আড়িপাতার সুযোগ দিতে চায় না, তবে সরকারের শর্ত অনুযায়ী এটি সেবা প্রদান করতে হবে।
আরটিভি/এমএ-টি