টেস্ট ক্রিকেটে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। গঠন করা হয়েছে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ, যার কাজ হবে টেস্ট ক্রিকেটকে দুই স্তরে ভাগ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরি করা। ২০২৫ সালের শেষ দিকে এই প্রতিবেদন জমা পড়বে, আর তাতে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৭ সাল থেকে চালু হতে পারে দুই স্তরের টেস্ট কাঠামো।
বর্তমানে আইসিসির ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশ রয়েছে, যাদের মধ্যে ৯টি অংশ নিচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। তবে নিচের সারির দলের ম্যাচগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ায় এবং আর্থিকভাবে লাভজনক না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই টেস্ট ক্রিকেটকে স্তরভিত্তিক করার আলোচনা চলছে।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দলগুলো যেমন: বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান আর র্যাঙ্কিংয়ের উপরের দলগুলো যেমন- ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বিপক্ষে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেলার সুযোগ পাবে না। ফলে দর্শক আকর্ষণ এবং রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে তিন বছরে দুটি করে সিরিজ খেলার একটি কাঠামো প্রস্তাব করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। বর্তমানে এ দলগুলো প্রতি চার বছরে দুটি সিরিজ খেলে। তবে ইংল্যান্ড এখনো এ বিষয়ে পূর্ণ সাড়া দেয়নি।
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসির চার দিনব্যাপী বার্ষিক সভায় এই প্রস্তাব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সভায় আট সদস্যবিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সংযোগ গুপ্ত। সদস্যদের মধ্যে আছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ এবং ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড।
তবে প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে আইসিসির ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন হবে। এতে বেশ কিছু দেশ দ্বিতীয় স্তরে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে, যা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
টেস্ট ক্রিকেটে আর্থিকভাবে সবচেয়ে লাভজনক ম্যাচগুলো সাধারণত ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দ্বিতীয় স্তরের দলগুলো যদি এই ধরনের হাই-প্রোফাইল সিরিজ আয়োজনের সুযোগ না পায়, তবে তাদের জন্য বড় আর্থিক ক্ষতি হবে। এ জন্য আইসিসি আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চিন্তা করছে।
বার্ষিক সভায় আরও আলোচনা হয় একটি নতুন টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ বা বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন নিয়ে। যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা আনা হয়নি, আইসিসি বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ উদ্যোগে একটি টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ চালু হয়েছিল, যা ২০১৪ সালে সম্প্রচার সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
সভায় পূর্ব তিমুর ক্রিকেট ফেডারেশন এবং জাম্বিয়া ক্রিকেট ইউনিয়নকে নতুন সহযোগী সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে আইসিসি। ফলে বর্তমানে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের সংখ্যা দাঁড়াল ১১০টি।
টেস্ট ক্রিকেটে স্তরভিত্তিক কাঠামো চালু হলে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ চেহারা বদলে যেতে পারে। যদিও এই প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে ২০২৭ সাল থেকে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরটিভি/এসকে