গলে বাংলাদেশের সবশেষ যে সুখস্মৃতি রয়েছে এই মুহূর্তে তার দিকে তাকিয়ে দেখার অনেক দরকার আছে মুশফিকের দলের। এরমধ্যে একটি দরকার হলো অনুপ্রেরণা নেয়া। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জন্য গর্বের সেই টেস্টে কী কী হয়েছিল ? পূর্ণ শক্তির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেইবারই প্রথম টেস্ট ম্যাচ ড্র করেছিল বাংলাদেশ; প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৫৭০ রানের পাহাড়ের জবাবে ৬ শতাধিক রানের পর্বত খাড়া করেছিল টাইগাররা; মুশফিকের ব্যাটে এসেছিল প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের ডাবল সেঞ্চুরি; এসেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের প্রায় দ্বিশতকের (১৯০) ইনিংস; টেস্ট ম্যাচ ড্র করতে শ্রীলঙ্কার মতো দলকে একরকম বাধ্য করা হয়েছিল; নিজেদের মাটিতেই তাদের চেপে ধরা গিয়েছিল বেশ আয়েশে।
এতো সব অর্জন যেই ম্যাচে ছিল সেই ম্যাচ থেকে তো অনেক কিছুই নিতে পারে বাংলাদেশ। যেমন, প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার প্রায় ৫শ’রানের স্কোরকে ভয় পাবার তেমন কোনো কারণ নেই। এর চেয়ে বেশি রান এখানে বাংলাদেশ করতে পারে, অতীত তাই বলে! কুশাল গুনারত্নে যদি প্রায় ২শ’ রানের ইনিংস খেলতে পারেন তাহলে সৌম্য/মুশফিক যে কেউ এখানে হাঁকাতে পারেন দ্বিশতক। কারণ, উইকেটে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো টার্ন বা বাউন্স নেই। মোটামুটি ফ্ল্যাট উইকেট। ইচ্ছে করলেই এখানে যে কেউ বড় রান করতে পারবেন। সেই ‘যে কেউ’ হতে পারেন সাকিব বা মাহমুদউল্লাহ এমনকি মেহেদি মিরাজও।
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে দুটি উইকেট বিলিয়ে দিয়ে না এলে এমনিতেই এতো হিসেব করতে হত না, বাংলাদেশ লিড নিতে পারবে কি পারবে না। তবে যেহেতু তামিম আর মুমিনুলের মতো বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতা রাখা দু’জন সাজঘরে ফিরেই গেলেন এখন একটু শঙ্কা তৈরি হয়েছেই। ১শ’ রান বিনা উইকেটে করে ফেললেও তাই নতুন দিনের শুরুতে সাবধানী ব্যাটিংই করতে হবে বাংলাদেশকে। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা বাংলাদেশ দলের জন্য হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সেশনে যদি ভাল ব্যাটিং করতে পারে দল তবেই আশার পালে হাওয়া লাগবে। যেরকম উইকেট এখন পর্যন্ত দেখা গেছে তাতে ভাল ব্যাটিং না করতে পারার কোনো কারণ দেখি না।
কুশাল পেরেরার ইনিংসটার দিকে একটু তাকালেই তো ব্যাটসম্যানদের বোঝার কথা, কীভাবে এখানে ব্যাটিং করতে হবে। খুব মনোযোগ দিয়ে এই তরুণ ব্যাটসম্যানের চমৎকার ইনিংসটার ঘণ্টা দুয়েক খেলা আমি দেখেছি। এক কথায় অসাধারণ! এতো কম বয়সে এতো ধৈর্য আর এতো চমৎকার টেকনিক- মুগ্ধ হওয়ার মতো। যেটুকু দেখলাম তাতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে তার পার্থক্যটা আমার কাছে পরিষ্কার। তিনি দরকারের বাইরে একটি শটও বেশি খেলেননি। আমি দেখেছি, অনেক বলেই তিনি মারতে পারলেও মারেননি। একেবারে সাদামাটা বল যেটি, সেটিতেও পরিস্থিতি দাবি করলে রান করেছেন, না হয় নয়। এই বাছ-বিচারটুকু যদি আমাদের ব্যাটসম্যানরা তৃতীয় দিন করতে পারেন তবে অন্তত ২/৩ জনের সেঞ্চুরি পাওয়া কোনো বিষয়ই না।
টেস্ট ম্যাচের বয়স যতো বাড়ে ততো উইকেটের আচরণে পরিবর্তন আসে ঠিক, তবে এমন উইকেটে তৃতীয় দিনে অন্তত বড় ধরনের পরিবর্তন আসার কথা না। এই মাঠের রেকর্ড যদিও বলে, এখানে শেষের ৩ দিন কম রান ওঠে, বাংলাদেশের খেলা এ মাঠের সবশেষ টেস্টে কিন্তু তুলনামূলক বেশি রানই উঠেছে। সুতরাং পরিসংখ্যান সবসময় সমানভাবে কাজ করবে তা কিন্তু নয়। মনঃসংযোগ ধরে রেখে ভাল ব্যাটিং করতে পারলে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ শ্রীলঙ্কার এই দলের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এখন টাইগার দলে রয়েছে।
বাংলাদেশের মুশফিক-সাকিব-মাহমুদুল্লাহদের অভিজ্ঞতার কাছে লঙ্কান দলটি অনেকটা নবীনই। পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের ক্রিকেট। তারপরও তারা যে প্রথম ইনিংসে এতো বড় স্কোর করেছে, আমি বলব সেটি তাদের মানসিক জোর আর ভাগ্য।
কথায় বলে, ভাগ্য কিন্তু সাহসীদের সঙ্গেই থাকে। যেমন কুশাল মেন্ডিসের প্রায় ২শ’ রানের ইনিংসটাই তো তারা পেলো ভাগ্যের জোরে। প্রথম বলেই তো সে আউট হয়ে গিয়েছিল শুভাশিসের বলে। আম্পায়ারের চোখ নো বলটা না ধরতে পারলে তো এই টেস্টের কাহিনিই এতোক্ষণ অন্যরকম হতে পারতো। ঐ আউটটা ঠিকঠাক হলে শ্রীলঙ্কা প্রথম দিনেই হয়তো অলআউট হয়ে যেতো। নিদেনপক্ষে প্রায় ৫শ’ রানের পাহাড় গড়তে তো পারতো না তারা। সুতরাং ভাগ্যদেবীর সহায়তা আমাদেরও লাগবে। আর তার আগে লাগবে মনের ভেতরে ভালো কিছু করতে পারার সাহস। আমার মনে হয় বর্তমান বাংলাদেশ দলের এই সাহস আছে। এখনই হতাশার কিছু দেখি না।
জাফর উল্লাহ সোহেল, লেখক- গণমাধ্যম কর্মী
কে/ জেএইচ