সেন্ট মার্টিনে যেতে গুনতে হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি

আরটিভি নিউজ

রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫ , ০৯:২৪ এএম


সেন্ট মার্টিনে যেতে গুনতে হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি
ছবি: সংগৃহীত

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় পরিসরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের কাছ থেকে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ফি’ আদায় এবং স্থানীয়দের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১২ জুলাই) পরিবেশ অধিদপ্তরে সেন্ট মার্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ একমাত্র দ্বীপ। এর বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যার কাজ শুরু হবে আগামী আগস্ট থেকে।

বিজ্ঞাপন

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায় করবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এই অর্থ দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় ব্যবহার করা হবে। তবে কত টাকা ফি ধার্য হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

প্রাথমিকভাবে দ্বীপের ৫০০ পরিবারকে নির্বাচিত করে হাঁস-মুরগি পালন, চিপস তৈরি ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য সহায়তা বাড়ানো হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, অক্টোবরের পর সেন্ট মার্টিনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেন্ট মার্টিনের ১০ হাজার বাসিন্দাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় ‘পরিবেশ প্রহরী’ নিয়োগ দেওয়া হবে এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু জাতের ধান চাষ, সুপেয় পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সাগরলতা লাগানো ও কেয়া বন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সেন্ট মার্টিন নিয়ে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) পক্ষ থেকে একটি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনায় সেন্ট মার্টিনকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়।

জোন-১ কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মাল্টিপল ইউজ জোন’ হিসেবে, যেখানে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অনুমোদন দেওয়া যাবে। জোন-২ কে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে সংবেদনশীল এলাকাকে রক্ষায় ‘বাফার জোন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জোন-৩ এ জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে। কিন্তু এখানে শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয়রা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে পারবে। জোন-৪ এ কঠোরভাবে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হবে। এখানে সব ধরনের প্রবেশ ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।

সিইজিআইএস-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক এইচ এম নুরুল ইসলাম বলেন, পর্যটনের চাপে সেন্ট মার্টিনে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে। হোটেল-রিসোর্ট বানাতে গিয়ে বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদের বিস্তার ঘটেছে। অতিরিক্ত লবস্টার ধরার কারণে এখন তা প্রায় হারিয়ে গেছে এবং জাহাজের নোঙরে ‘কোরাল ক্ষতিগ্রস্ত’ হচ্ছে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং টেকনাফের ইউএনও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

 

আরটিভি/টি

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission