বাল্টিকের বড় সমস্যা ভাঙন, নাকি দূষণ

ডয়চে ভেলে

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ , ১১:৫৩ পিএম


বাল্টিকের বড় সমস্যা ভাঙন, নাকি দূষণ
সংগৃহীত ছবি

লাটভিয়ার পশ্চিমে মনোরম সাদা বালুকাময় সৈকত রয়েছে। বার্নাতি এলাকার আশেপাশের অঞ্চল পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু সাগরের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন বেড়েছে এবং ঘর-বাড়ি গ্রাস হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তবে একজন ভূতত্ত্ববিদ মনে করছেন, ভাঙনের চেয়েও বাল্টিকের বড় সমস্যা দূষণ। ভাঙনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ৮২ বছর বয়সি আর্নেস্টস শ্লিসারিস। লাটভিয়ার পশ্চিম উপকূলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভিত বার্নাতি এলাকায় থাকেন আর্নেস্টস। তার পুরো গ্রাম সমুদ্র ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখনো ঝড়ের সময় এলাকাটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে তার বাড়িটি এখনো টিকে আছে। কারণ, তিনি অন্য বাড়ির ধ্বংসস্তূপ ব্যবহার করে ঢেউকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

আর্নেস্টস বলেন, আমার সঠিক বছরটি মনে নেই, তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে ঘটেছিল। এখানকার সবকিছু ভেসে গিয়েছিল। তিনজন সীমান্তরক্ষীর ঘরও এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সেগুলোও ভেসে গিয়েছিল। আমি সেই রাতে সম্পূর্ণ পোশাক পরে বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম, বুট পরে ছিলাম, দৌড়ানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম! বেড়ার উপর পর্যন্ত পানি উঠেছিল।

বিজ্ঞাপন

আর্নেস্টস শ্লিসারিসকে জাগিয়ে তোলা ঝড়টি ১৯৬৭ সালের অক্টোবরের এক রাতে এসেছিল। সকালে সমুদ্র আবার শান্ত হয়ে গিয়েছিল, পানি সরে গিয়েছিল। কিন্তু পরে আবারও একই ঘটনা ঘটেছে। বছরের পর বছর ধরে উপকূলরেখা সমতলের অন্তত ১০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। উপকূল এত মারাত্মকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার একটি কারণ ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লিয়াপায়া বন্দর। তার কারণে পুরো উপকূলরেখা বদলে গেছে।

১৯ শতকের শেষ দিকে নির্মিত সাবেক এক সামরিক দুর্গের ধ্বংসাবশেষ এখন সেই পরিবর্তনের সাক্ষ্য দিচ্ছে। সবই বন্দরের কারণে হয়েছে। সমুদ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে নির্মিত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ এখন সাগরে ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বন্দরটি নির্মাণের সময় একটি বিশাল ব্রেকওয়াটার অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছিল। জাহাজগুলিকে নোঙর করানোর জন্য সমুদ্রতল গভীর করা হয়েছিল। এটি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণে বালি খনন করে তা সমুদ্রের আরো গভীরে জমা করা হয়েছিল। সে কারণে সমগ্র পশ্চিম উপকূল জুড়ে পানির নীচে বালুর স্বাভাবিক চলাচলের পথ পরিবর্তিত হয়েছিল- যা উপকূলীয় ভাঙনের কারণ।

জলবায়ু পরিবর্তন আরেকটি কারণ বলে গবেষকরা বলছেন। এক্ষেত্রে, তাপমাত্রার উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার চেয়েও বেশি দায়ী চরম আবহাওয়ার ঘটনা। ভূতত্ত্ববিদ লিগা ব্রুনিনা বলেন, এখন ঘন ঘন ঝড় হচ্ছে, এবং এগুলো উপকূল ধ্বংস করে দিতে পারে। এগুলো বাতাসের দিক পরিবর্তনেরও কারণ হতে পারে। ফলে সমুদ্রের আগ্রাসন আরো তীব্র হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

লিগা ব্রুনিনা দীর্ঘদিন ধরে লাটভিয়ার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগর উপকূল নিয়ে গবেষণা করছেন। ভাঙন নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। কারণ, লিগা মনে করেন, মানুষ যা কেড়ে নিয়েছিল, প্রকৃতি এখন তা পুনরুদ্ধার করছে। তার মতে, ভাঙনের চেয়েও বেশি চিন্তার কারণ, সাগরের দূষণ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বাল্টিক সাগরে অনেক সমস্যা আছে। পুরনো যুদ্ধাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে দূষণ, মাইক্রো প্লাস্টিকের কারণে দূষণ, ইত্যাদি। ভাঙন - হ্যাঁ, এটাও সুখকর নয়, কারণ, কেউ তাদের জমি হারাতে চায় না। তবে এটা এমন এক সমস্যা, যা আমরা যদি বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করি, তাহলে মোকাবেলা করা সম্ভব। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, বন্দরটি সরিয়ে ফেলতে হবে এবং বন্দরে আর কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। যদিও এসব সহজ নয়। তবে ভাঙনই আসলে সবচেয়ে খারাপ জিনিস নয়।

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission