আগুনে যত শতাংশ পুড়লে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫ , ১০:৫৮ পিএম


আগুনে যত শতাংশ পুড়লে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়
ছবি: সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় একজন মানুষের শরীরের কত শতাংশ অংশ দগ্ধ হয়েছে, সেটি যেমন তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে শরীরের তুলনামূলক কম অংশ দগ্ধ হলেও, এমনকি বাহ্যিকভাবে না পুড়লেও, মৃত্যু ঘটতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এর কারণ, শুধু বাহ্যিক দগ্ধতাই নয়—ধোঁয়ার বিষক্রিয়া, শ্বাসনালির পুড়ে যাওয়া বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্ষতির মতো অদৃশ্য ঝুঁকিগুলোও ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

আগুনের সঙ্গে মানুষের এই কঠিন লড়াইয়ে বেঁচে থাকার যেমন কিছু সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক সময় অদৃশ্য থাকা বিপদের জটিল হিসেব।

বিজ্ঞাপন

কত শতাংশ পুড়েছে, কীভাবে বোঝা যায়?
শরীরের কতটা অংশ দগ্ধ হয়েছে, তা নির্ধারণ করা রোগীর দ্রুত চিকিৎসা শুরু ও জীবনরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হিসাব নির্ণয়ে চিকিৎসকেরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ও চার্ট ব্যবহার করে থাকেন।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরমিন আক্তার সুমি বলেন, কত শতাংশ পুড়েছে, তা নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো ‘রুল অব নাইন (Rule of Nine)।’ এই পদ্ধতিতে শরীরকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি অংশকে ৯ শতাংশ বা তার গুণিতক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মাধ্যমে মোট পুড়ে যাওয়া অংশের শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একটি হাত (বাহু থেকে আঙুল পর্যন্ত) ধরা হয় ৯%, একটি পায়ের সামনের ও পেছনের অংশ মিলিয়ে ১৮ শতাংশ, এবং শরীরের সামনের ও পেছনের অংশ পৃথকভাবে ১৮ শতাংশ করে ধরা হয়। এভাবে পুরো শরীরকে ১০০ শতাংশে ভাগ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে ডা. সুমি জানান, ‘রুল অব নাইন’ দ্রুত প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য সহায়ক হলেও, আরও সঠিক ও বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্য ‘লান্ড অ্যান্ড ব্রাউডার চার্ট (Lund and Browder Chart)’ ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট বা বার্ন সেন্টারে আমরা এই চার্ট অনুসরণ করি। এই চার্টে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুর জন্য আলাদা অঙ্কন থাকে, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ দগ্ধ হলে তার কত শতাংশ ধরা হবে, তা পরিষ্কারভাবে নির্ধারিত। পাশাপাশি বয়সভেদে শরীরের গঠনগত পার্থক্যও এতে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

যেমন, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পুরো মুখ পুড়লে সেটিকে প্রায় ৪.৫ শতাংশ  ধরা হয়, কিন্তু শিশুর মাথা তুলনামূলকভাবে বড় হওয়ায় মুখ ও মাথা মিলিয়ে সেই অংশের হিসাব ৯ শতাংশ  পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়াও, অনিয়মিত আকারের পোড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ‘রুল অব থাম্ব (Rule of Thumb)’ পদ্ধতি। এতে রোগীর হাতের তালুকে ১ শতাংশ  ধরে পুড়ে যাওয়া অংশের আনুমানিক হিসাব করা হয়। তবে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকেরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ‘রুল অব নাইন’ ও ‘লান্ড অ্যান্ড ব্রাউডার চার্ট’—এই দুটি পদ্ধতি, যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।


কত শতাংশ দগ্ধ হলে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে?
দগ্ধতার মাত্রা ও তার ফলাফল নির্ভর করে শুধু শরীরের কতটা অংশ দগ্ধ হয়েছে, তা নয়; রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা, বিদ্যমান রোগ এবং পোড়ার ধরনসহ নানা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।

ডা. শরমিন আক্তার সুমি জানান, কিছু ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়া গেলেও প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা মূল্যায়ন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে—যেমন রোগী তরুণ এবং তার আগে থেকে কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধতা সাধারণত নিরাময়যোগ্য হিসেবে ধরা হয়।

তিনি আরও বলেন, ১৫ শতাংশ  থেকে ৩০ শতাংশ বার্ন হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি ৩০ শতাংশের বেশি অংশ পুড়ে যায়, তাহলে রোগীর অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠে। ৩০ শতাংশ  থেকে ৫০ শতাংশ দগ্ধ রোগীদের বাঁচাতে অত্যন্ত সতর্ক চিকিৎসা, উন্নত সরঞ্জাম এবং নিবিড় মনোযোগ প্রয়োজন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission