শেফ বা বাবুর্চিদের লম্বা টুপি পরার রহস্য কী

আরটিভি নিউজ

রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ০৫:১৮ পিএম


শেফ বা বাবুর্চিদের লম্বা টুপি পরার রহস্য কী
ছবি: সংগৃহীত

টিভি, সিনেমা কিংবা কোনো বড় রেস্তোরাঁয় গেলে আমাদের চোখে পড়ে শেফের বিশেষ পোশাক। সেই পোশাকের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো অংশ হলো শেফের মাথায় থাকা উঁচু সাদা টুপি। এই লম্বা টুপিটিই যেন একজন শেফের আসল পরিচয় বহন করে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, শেফরা কেন এমন লম্বা টুপি পরেন? এই টুপি শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন এক ঐতিহাসিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব।

বিজ্ঞাপন

টুপি পরার মূল কারণ

প্রথম ও প্রধান কারণ হলো ‘স্বাস্থ্যবিধি’। রান্নার সময় যেন চুল বা ঘাম খাবারে না পড়ে, সে জন্যই এই টুপির ব্যবহার। তবে টুপির কাজ এখানেই শেষ নয়। এর উচ্চতা, ডিজাইন এবং রং একজন শেফের অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব ও অবস্থানকেও নির্দেশ করে। অনেক রেস্তোরাঁয় শুধু হেড শেফ ও স্যু শেফই উঁচু টুপি পরেন। রান্নাঘরে কে কতটা সিনিয়র, তা সহজেই অনুমান করা যায় টুপির ধরন ও উচ্চতা দেখে।

বিজ্ঞাপন

311445283_474637008029819

ইতিহাসের পাতায় শেফের টুপি

শেফদের টুপির ইতিহাস অনেক পুরোনো। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে অ্যাসিরীয় রাজা আশুরবানিপাল তাঁর পাচকদের আলাদা টুপি পরতে বাধ্য করেন, যেন তারা সহজে চেনা যায় এবং কেউ রাজাকে বিষ খাইয়ে পালাতে না পারে।ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি অষ্টম একবার খাবারে চুল পেয়ে তার শেফের শিরশ্ছেদ করেছিলেন। এরপর থেকে শেফদের মধ্যে টুপি পরার বিষয়টি আরও নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালু হয়। আধুনিক সময়ের উঁচু টুপির প্রচলন করেন ফ্রান্সের কিংবদন্তি শেফ মারি আন্তোয়ান ক্যারেম। তিনি রান্নাঘরকে সেনাবাহিনীর মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, যার প্রতিফলন পড়ে ইউনিফর্মেও। পরে বিখ্যাত শেফ অগুস্ত এসকোফিয়ে এই ধারণাকে আরও পেশাদারভাবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং টুপির উচ্চতাকে পদমর্যাদার প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করেন।

বিজ্ঞাপন

টুপির উচ্চতা কতটা?

বিজ্ঞাপন

সাধারণভাবে শেফদের টুপির উচ্চতা হয়ে থাকে ৯ থেকে ১২ ইঞ্চি। তবে ক্যারেম নিজে পরতেন ১৮ ইঞ্চি উঁচু একটি টুপি, যেটি কার্ডবোর্ড দিয়ে শক্ত করা হতো। বিশ্বে সবচেয়ে উঁচু শেফ টুপির রেকর্ড গড়েছেন মার্কিন শেফ ওডিলন ওজারে, যিনি পরেছিলেন ১৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা একটি টুপি। ২০১৮ সালে এটি গিনেস বুকে রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

টুপির কুঁচির রহস্য

শেফ টুপির আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো এর ভাঁজ বা প্লিট। বলা হয়, এক শ ভাঁজ মানে ওই শেফ একশ রকম ডিম রান্না করতে পারেন। যদিও এটি পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবুও এ রেওয়াজটি এখনো জনপ্রিয়। এ ছাড়া, এই ভাঁজগুলো টুপির ভেতরে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করে, ফলে গরম রান্নাঘরেও মাথা ঠান্ডা থাকে, যা শারীরিক স্বস্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আধুনিক রান্নাঘরে টুপির পরিবর্তন

বর্তমান সময়ের রান্নাঘরে আর সব জায়গায় ঐতিহ্যবাহী উঁচু টুপি দেখা যায় না। অনেক শেফ পরেন খাটো স্কাল ক্যাপ, কটন বিনি, বেকারদের ফ্লফি হ্যাট বা এমনকি সাধারণ বেসবল ক্যাপ। অনেকেই এখন টুপির বদলে হেড স্কার্ফ ব্যবহার করেন, যাতে তাদের সংস্কৃতি বা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। কিছু আধুনিক কিচেনে ব্যবহৃত হয় কাগজের তৈরি ‘পেপার টোক’, যা হালকা, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সহজে পরিধানযোগ্য।

টুপির রং কেন সাদা?

সাদা রং পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতীক। এই রঙে সামান্য দাগও স্পষ্ট দেখা যায়, ফলে শেফদের পরিপাটি থাকার বিষয়ে সচেতনতা বজায় থাকে। তবে অনেক কিচেনে এখন কালো বা গাঢ় রঙের টুপি ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে ওপেন কিচেনে, যাতে দাগ সহজে ধরা না পড়ে।

রান্নাঘরে টুপি কি বাধ্যতামূলক?

হ্যাঁ, অধিকাংশ বাণিজ্যিক রান্নাঘরে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। টুপির ধরন যেমনই হোক না কেন, মূল উদ্দেশ্য একটাই—খাবারে যেন কোনোভাবেই চুল না পড়ে। শেফের টুপি কেবল একটি পোশাক নয়, এটি একাধারে স্বাস্থ্যবিধি, পেশাদারিত্ব, ঐতিহ্য ও সম্মানের প্রতীক। এর উচ্চতা বা ডিজাইন যাই হোক না কেন, আসল বিষয় হলো—রান্না এবং পরিবেশনের প্রতি শ্রদ্ধা, যত্ন ও ভালোবাসা প্রকাশ করা।

 

  

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission