রোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক একটি পরীক্ষা পদ্ধতি হলো ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে থাকা কোনো অঙ্গের স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়। এর সাহায্যে সেই অঙ্গের কোনও অস্বাভাবিকতা বা নির্দিষ্ট রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব।
যেসব রোগ নির্ণয়ে এমআরআই
মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, হৃৎপিণ্ডসহ দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যেকোনো সমস্যা নির্ণয় করতে এমআরআই একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। এর মাধ্যমে যেসব রোগ নির্ণয় করা যায়—
• টিউমার, স্ট্রোকসহ মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ।
• মেরুদণ্ডের রোগ বা আঘাত।
• হাঁটু, গোড়ালি, কবজি, কাঁধ ইত্যাদি অস্থিসন্ধি, হাড় ও মাংসপেশির সমস্যা।
• রক্তনালির রোগ।
• নাক, কান, গলা ও চোখের সমস্যা।
• প্রোস্টেটের সমস্যা।
• ক্যানসার।
• নারীদের তলপেট ও স্তনের অস্বাভাবিকতা।
• লিভার, কিডনি, পিত্তনালিসহ বিভিন্ন আন্ত্রিক রোগ।
কিভাবে এমআরআই করা হয়
রোগীকে শোয়ানোর মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরপর তাকে এমআরআই যন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এই সময় রোগীকে একাগ্র ও শান্তভাবে শুয়ে থাকতে হয়, কারণ একটু নড়াচড়া করলে ছবি ঝাপসা হতে পারে এবং ভুল ফলাফলের সম্ভাবনা থাকে। পরীক্ষার সময় একধরনের শব্দ হয়, যা সাধারণ। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেক রোগীই স্থিরভাবে থাকতে পারেন না, তাই তাঁদের জন্য হালকা ঘুমের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটি খুবই স্বাভাবিক এবং এর কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে না।
পরীক্ষার সময়কাল
সাধারণত এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ১০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগে, কখনো কখনো এক ঘণ্টাও লাগতে পারে। পুরো সময় জুড়ে টেকনোলজিস্ট (স্ক্যানার অপারেটর) মনিটরে রোগীর অবস্থান দেখছেন। প্রয়োজন হলে বা অসুবিধা হলে রোগী যোগাযোগ করতে পারেন বা কথা বলতে পারেন।
নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন
এমআরআই পরীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যথাহীন এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নিরাপদ। অন্য স্ক্যানের মতো এতে কোনো ক্ষতিকর বিকিরণ বা তেজস্ক্রিয়তা নেই। ফলে এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় না। ব্যবহৃত কনট্রাস্ট এজেন্টও সাধারণত সমস্যা সৃষ্টি করে না।
সতর্কতা
ধাতব বস্তু থাকলে এই পরীক্ষায় ঝুঁকি বাড়ে, তাই দেহের অভ্যন্তর বা বাইরে থাকা সব ধাতব বস্তু যেমন হার্টের কৃত্রিম ভালভ, হাড়ের রড, মুখের কৃত্রিম দাঁত ইত্যাদি আগে থেকে জানিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, মানিব্যাগ, এটিএম কার্ড, পার্স, ইয়ারফোন, ঘড়ি, চশমা, কলম, চাবি, জুতা, গয়না, সেফটিপিন, মোবাইল ইত্যাদি সরিয়ে রাখতে হবে।
যারা এই পরীক্ষা করাতে পারবেন না
এমআরআই খুবই ফলপ্রসূ ও নির্ভরযোগ্য, তবে কিছু রোগীর জন্য সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলা ভালো:
• গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এই পরীক্ষা না করাই উত্তম। অন্য সময়ের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।
• ৮ সপ্তাহের মধ্যে চোখ, নাক, কান, গলা, হার্ট, মস্তিষ্ক বা রক্তনালির অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে এই সময় পরীক্ষা এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে অবস্থা দেখিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রেডিওলজিস্টই সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরটিভি/এসআরএম