ইটালির ভেনিসে চলছে আর্কিটেকচার বিয়েনালে৷ উৎসবে যে শব্দটি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো অভিযোজন। খরা, বন্যার মতো নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়া বিশ্বের জন্য আমরা কীভাবে ভবন ডিজাইন করতে পারি, তা তুলে ধরছেন স্থপতিরা। ১০ মে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন।
ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালের কিউরেটর কার্লো রাত্তি বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে আমরা কীভাবে আরও ভালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারি, এটি ধ্বংস না করে এর মধ্যেই শহর গড়তে পারি, তা আমাদের জানতে হবে। কিউরেটর রাত্তির কাছে মানুষ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সমন্বয় করা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি লাভার মতোপ্রতিকূল প্রাকৃতিক শক্তিও। লাভার ধ্বংসাত্মক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে টেকসই সম্পদে রূপান্তরিত করতে চান স্থপতিরা, যা একটি শহর নির্মাণের উপকরণ হতে পারে। আইসল্যান্ডের প্যাভিলিয়নে বিষয়টি দেখানো হচ্ছে।
ঐ প্যাভিলিয়নের কিউরেটর স্থপতি আর্নহিল্ডুর পালমাডটিয়ে বলেন, আইসল্যান্ডে এখন মাঝেমধ্যে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে। তাই আমরা ভাবছিলাম, লাভা নিয়ে কাজ করার জন্য এটি একটি ভালো সময়। নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায় কিনা ভাবছি। বর্তমানে ব্যবহৃত নির্মাণ উপকরণের বৈশিষ্ট্যগুলো লাভায়ও আছে: যেমন কাঠামো, কাচের ন্যায় বা ইনসুলেশন। অগ্ন্যুৎপাতের সময় লাভা সরাসরি প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
ভেনিস বিয়েনালেতে স্থপতিরা ভবন তৈরির নতুন ধারণা ও উপকরণ খুঁজে পেতে জীববিজ্ঞানী, পদার্থবিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একসাথে কাজ করছেন। যেমন ভেনিসের লেগুন থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ইট তৈরি করে দেখাবো হচ্ছে। আরো আছে হাতির গোবর থেকে তৈরি ইট। তবে নির্মাণের সময় কার্বন নির্গমন কমানোর একমাত্র উপায় নতুন উপকরণ খুঁজে পাওয়া নয়। যেমন ড্যানিশ প্যাভিলিয়নে একটি বিদ্যমান ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ দেখানো হচ্ছে। ঐ ভবন তৈরির সময় পাওয়া উপকরণ দিয়েই এই কাজ হচ্ছে।
স্থপতি সোরেন পিলমান বলেন, আমরা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি যারা আমাদের নির্মাণ বর্জ্য আবার কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার কিছু উপায় দেখিয়েছেন। প্যাভিলিয়নে যা কিছু দেখতে পাচ্ছেন তা প্যাভিলিয়ন থেকেই এসেছে। অর্থাৎ, কিছুই সরানো হয়নি এবং উপকরণগুলো শুধু পুনর্গঠিত করা হয়েছে।
কাঠ, পাথর, বালি, কাদামাটিসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাধারণত যা করা হয় তা করার পাশাপাশি এগুলোকে আর অন্য কোনো কাজে লাগানো যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে এখন অনেক ধ্বংসাবশেষ তৈরি হচ্ছে।
সার্কুলারিটি অন দ্যা এজ শীর্ষক ইনস্টলেশনে ইউক্রেনের স্থপতিরা দেশ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
রিথিঙ্ক এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোমান পুচকো জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা যুদ্ধ ও ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট এই অন্ধকার সময়ে ইউক্রেনীয়দের আরও উদ্ভাবনী, সবুজ, আরও ইতিবাচক পুনর্গঠনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে চাই। তাই আমরা ইউক্রেন পুনর্গঠনে এই উপকরণগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মাধ্যমের সহায়তা নিচ্ছি।
এআই-এর সহায়তায় যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ একটি নতুন জীবন পাবে। ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালের সাড়ে সাতশর বেশি অংশগ্রহণকারীর লক্ষ্য একটাই। সেটি হলো, সংকটে থাকা একটি বিশ্বকে পুনর্গঠন এবং পুনর্নির্মাণ করা।
আরটিভি/এএইচ