হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা

কেমন আছে এসি রবিউলের পরিবার

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

শুক্রবার, ৩০ জুন ২০১৭ , ১১:০১ এএম


কেমন আছে এসি রবিউলের পরিবার

মোহাম্মদ রবিউল করিম ওরফে কামরুল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করে ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনারের (এসি) দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। গেলো বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন তিনি।

বিজ্ঞাপন

দেখতে দেখতে একটি বছর পেরিয়ে গেল। কেমন আছে তার পরিবার।এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আরটিভির প্রতিবেদক হাজির হন রবিউলের গ্রামের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে। কথা হয় নিহত রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা, আট বছরের পুত্র সাজিদুল করিম সামি, কনিষ্ঠ কন্যা কামরুন্নাহার রায়না, ছোট ভাই সামসুজ্জামান সামস এবং বৃদ্ধ মা করিমুন নেছার সঙ্গে।

রবিউলের পিতা আব্দুল মালেক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় ২০০৬ সালে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান। পিতার অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার পড়ে যায় বিপাকে। রবিউলের চাকরি হওয়ার পর পরিবারটি খানিকটা ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু রবিউলের অকাল মৃত্যুতে পরিবারটি ফের সংকটে পড়ে। কেননা রবিউলই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

বিজ্ঞাপন

রবিউলের মা বলেন, রবিউলের মৃত্যুর পর সরকারিভাবে প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ব্যাংকে জমা আছে। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট থেকে যা পাচ্ছি তাতে সংসার কোনরকমে চলে যাচ্ছে। ছোট ছেলে শামসুজ্জামান শামস ও রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমার একটি চাকরি হলেই বেঁচে যাই।

তিনি বলেন, তার কনিষ্ঠপুত্র সামসুজ্জামান সামস উচ্চ শিক্ষিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টারস (৩৫তম ব্যাচ) সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে, রবিউলের স্ত্রী সাভার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশে অনার্স ও মাস্টারস করেছে।

তিনি বলেন, তার সন্তান রবিউল দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই সরকারের উচিৎ তার স্ত্রী ও ছোট ভাইকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিয়ে পরিবারটির পাশে দাড়ানো।

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমাকে সেখানে প্রথম শ্রেণীর একটি পদে চাকুরির আশ্বাস দিয়েছিল। ভিসি বলেছিলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে হবে। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও তার চাকরি এখনও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও আশ্বাস দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উম্মে সালমা।

বিজ্ঞাপন

উম্মে সালমা বলেন, আট বছরের পুত্র সামি ও ১১ মাসের কন্যা রাইয়ানকে বাবার আদর্শে গড়ে তুলতে চান। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, তার সন্তানরা ভালো মানুষ হোক-এটাই তার প্রত্যাশা। যেমনটি প্রত্যাশা ছিল তাদের বাবা প্রয়াত রবিউলের।

রবিউলের ভাই শামসুজ্জামান শামস বলেন, ভাই মারা যাওয়ার পর ভাবী ভাইয়ের স্মৃতিকে আকরে ধরে আছেন। দিনের সবটা সময়ই ভাইকে আগলে রাখছেন তিনি। ভাবীকে যদি কোন কর্মেক্ষেত্রে প্রবেশ করানো যেত তবে ভাইয়ের স্মৃতিগুলোকে ভুলে থাকার সুযোগ তৈরি হতো। আবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য তার একটি চাকরির বিশেষ দরকার।

এদিকে, রবিউলের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অফ ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি- ব্লুমসের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা স্কুলের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্কুলটি ছিল রবিউল এর স্বপ্ন। তার পরিবার, অন্যান্য সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিদ্যালয়টিকে রবিউলের পরিকল্পনা অনুসারে চালাতে ও সহায়তা দিতে অঙ্গীকার করেছেন।

২০১১ সালে, রবিউল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন এর শিক্ষার্থী সংখ্য ৪১। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রবিউল ইউনিফর্ম, টিফিন খাদ্য, বই, স্টেশনারি এবং সরঞ্জাম এবং স্কুল-ভ্যানসহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমস্ত খরচ বহন করতেন।

রবিউলের এর ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস বলেন, তিনি শিক্ষার্থী এবং দরিদ্রদের জন্য ক্যাম্পাসে একটি আবাসিক ভবন এবং হাসপাতাল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি অসচ্ছল বৃদ্ধদের জন্য বৃদ্ধনিবাস গড়তে চেয়েছিলেন।

তিনি এই প্রতিষ্ঠানের তহবিলের জন্য একটি কৃষি প্রকল্প করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি এরই মধ্যে রবিউরের চাচার মালিকানাধীন ১৩৭ শতাংশ জমির ওপর একটি কলাবাগান এবং পুকুরে মাছ চাষ শুরু হয়েছে।

২০০৭ সালে তিনি তার পিতার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার গ্রামে নজরুল বিদ্যাশিরী নামের একটি কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন।
রবিউলের স্মৃতি ধরে রাখতে এইসব প্রতিষ্ঠান যাতে চলমান থাকে এবং এর কল্যাণে সমাজ যাতে আলোকিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার এবং সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানান প্রয়াত রবিউলের ছোট ভাই সামসুজ্জামান শামস।  

জেএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission