জীবনে যখন আর কোনো আশা থাকে না, তখন সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়াই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু অ্যাড্রিয়ানা তখনও একজন শিশুকে গর্ভে ধারণ করছিলেন। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী, গর্ভস্থ সন্তানের হৃদস্পন্দন শুরু হয়ে গেলে মায়ের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া বেআইনি, এমনকি মা ব্রেইন ডেড হলেও।
এই আইনের প্রতি অনুগত থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারের মতামত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়, সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত অ্যাড্রিয়ানাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হবে। মে মাসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাড্রিয়ানার মা, তিনি বলেন—মেয়ের জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবারের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে।

অ্যাড্রিয়ানার মা তার অনাগত নাতির সুস্থতা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বটে, তবে মেয়ে হারানোর পরও পরিবারের সিদ্ধান্তের সুযোগ না থাকা নিয়েই ছিল তার মূল অভিযোগ। আইন আবেগের ঊর্ধ্বে, কিন্তু মানুষিক যন্ত্রণাও তো অস্বীকার করার নয়।
লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে একজন মানুষের দেহকে সচল রাখা সম্ভব হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন ও রক্তসঞ্চালন চালিয়ে রাখা হয় যন্ত্রের সহায়তায়। ব্রেইন ডেড হলেও অ্যাড্রিয়ানার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চলমান রাখা হয়, যাতে গর্ভস্থ শিশুটি বেড়ে উঠতে পারে।
ফেব্রুয়ারি থেকে জুন, প্রায় চার মাস ধরে এভাবেই চলতে থাকে এই অসম লড়াই। অবশেষে জুন মাসে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নেয় অ্যাড্রিয়ানার পুত্রসন্তান। ওজন ছিল দুই পাউন্ডেরও কম, জন্মের পরই তাকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।
জীবিত মায়ের গর্ভে থাকলে হয়তো শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি আরও স্বাভাবিক হতো। তবু ব্রেইন ডেড মায়ের শরীরে এত দিন টিকে থাকা এবং শেষ পর্যন্ত জন্ম নেওয়াটাই এক অলৌকিক ঘটনা। শিশুটির জন্মের কয়েক দিন পর, ৩১ বছর বয়সী অ্যাড্রিয়ানার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।
নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘চান্স’—অর্থাৎ ‘সম্ভাবনা’। এমন এক নাটকীয়, বেদনাঘন পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া এই শিশুটির ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এক অলৌকিক যাত্রার সাক্ষী হয়ে সে পৃথিবীতে এসেছে—এটুকু নিশ্চিত।
সূত্র: বিবিসি