শিক্ষক শুধু পাঠদানের মাধ্যমেই শিক্ষক নন, একজন প্রকৃত শিক্ষক হলেন সেই, যিনি দায়িত্ব, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতি গঠনের বীজ বপন করেন। আমরা পাঠ্যবইয়ে ‘আদর্শ শিক্ষক’-এর সংজ্ঞা পড়েছি।
কিন্তু বাস্তব জীবনে এমন শিক্ষক ক’জন দেখতে পাই? মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মহীয়সী নারী শিক্ষিকা “মেহেরীন চৌধুরী” আমাদের চোখে দেখিয়ে দিলেন শিক্ষকতা মানে কেবল ক্লাসে পাঠদান নয়, বরং প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার নাম।
তিনিই হইতো সেই ব্যতিক্রম, যার হৃদয়ে ভালোবাসা ছিল, দায়িত্ববোধ ছিল, আর সবচেয়ে বড় কথা মনুষ্যত্ব ছিল। মেহেরীন চৌধুরী ম্যামের ছবিগুলো শুধু একটি মূহূর্ত নয়, যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। আগুনের ভয়াবহতা যখন সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলেছে, তখন একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
তিনি ছিলেন তাদের জন্য মা, অভিভাবক, আশ্রয়, এবং সবচেয়ে বড় কথা একজন সত্যিকারের মানুষ। বর্তমানসমাজের শিক্ষা ব্যবস্থায়, এমন শিক্ষক কতটা বিরল! যারা শুধু চাকরি নয়, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসার তাগিদ থেকে এই পেশাকে গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সেই বিরল মানুষের একজন, যিনি মৃত্যুর মুহূর্তেও শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
শিক্ষকরা এমন হওয়াই উচিৎ পাঠ্যবই থেকে শুরু করে কর্মজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে, এমনকি রাজনৈতিক অবস্থানেও। আপনারা যারা নেতা, যারা নীতিনির্ধারক, যারা অভিভাবক, যারা শিক্ষাকর্মী আপনারা কি কখনো এমন মমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন?
নাকি সময়, সুযোগ আর স্বার্থের দোহাই দিয়ে মানুষের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? আপনারা যারা সমাজে, রাষ্ট্রে বা রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে রয়েছেন তাদের সবার জন্য এই ঘটনাটি একটি আয়নার মতো। আপনাদের প্রত্যেকের নিজেদের দিকে তাকাতে ইঙ্গিতকরে। আর আপনারা যারা ক্ষমতার আসনে বসে আছেন এবং ক্ষমতায় আসবেন তারা অন্তত একবার আয়নায় সামনে তাকান, নিজের মনুষ্যত্বকে প্রশ্ন করুন: "আমি কি এমন হতে পেরেছি? আমি কি কারও আশ্রয় হতে পেরেছি, না নিজের স্বার্থেই ছুটে গেছি?"
এই এক অদম্য নারী শিক্ষিকা “মেহেরীন চৌধুরী” নিজের জীবন দিয়ে আমাদের শেখালেন, মানুষ হয়ে ওঠা কাকে বলে এবং আমাদের সবার কাছে প্রশ্ন রেখে গেলেন "তোমরা সত্যিই মানুষ হতে পেরেছো?" শ্রদ্ধাঞ্জলি সেই মহান শিক্ষিকার প্রতি, যিনি সাহস, মমতা আর আত্বত্যাগের এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
লেখক: আইনজীবী, আয়কর
আরটিভি/এসকে