বিনোদনের চাহিদা পূরণে মানুষ চলচ্চিত্রমুখী হচ্ছে, কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসন ও আইন অমান্যের দৃশ্য দর্শক সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে ধূমপান ও মাদক সেবনের দৃশ্য, অশালীন ভাষার সংলাপ কিশোর-তরুণদের ক্ষতিকর নেশা ও নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত করছে, যা বড় বিপদের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক-প্রযোজক, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থা—সবারই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন।
৩০ জুলাই (বুধবার) মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) কর্তৃক পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানস দেশের বিনোদন মাধ্যমে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ও প্রচারণা সামগ্রী পর্যবেক্ষণ করে সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, ঈদে মুক্তি পাওয়া ৬টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৫টিতেই ধূমপান ও মাদক সেবনের দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে। দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া ‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’ চলচ্চিত্রে মোট ১৬০ বার ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হয়। এছাড়া, ই-সিগারেট ও অন্যান্য মাদকের ব্যবহারও চিত্রায়িত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা মানা হয়নি। এমনকি পোস্টার, ট্রেইলার, টিজার থাম্বনেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার সামগ্রীতেও ধূমপানের দৃশ্য রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দায়সারাভাবে দেওয়া হলেও তা আইনি বিধান অনুযায়ী ছিল না।
আমদানিকৃত নেপালি চলচ্চিত্রেও দেশের প্রচলিত আইন ও নীতিমালার লঙ্ঘন দেখা গেছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরিত্রকে দিয়ে ধূমপান দেখানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে এসেছে ‘উৎসব’ চলচ্চিত্রটি। এতে ধূমপান বা মাদকসেবনের দৃশ্য না থাকলেও শুরুতে, বিরতিতে ও শেষে যথাযথ সতর্কবার্তা প্রদর্শন করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য নির্মাতা ‘কাহিনির প্রয়োজনে’ আইনের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন, সেখানে ‘উৎসব’ একটি ইতিবাচক ও দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
বিনোদন মাধ্যমে আইন লঙ্ঘন প্রসঙ্গে নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে পরিবার নিয়ে চলচ্চিত্র দেখতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। চলচ্চিত্র, নাটক এবং ওটিটি কনটেন্টে ভাষার অপব্যবহার ও ধূমপান-মাদকসেবনকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। পুলিশ চরিত্রের মাধ্যমে ধূমপান দেখানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। রাষ্ট্রকে এসব আইন ও নীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে তরুণ প্রজন্ম একদিন রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে মানস সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, দর্শক টানতে চলচ্চিত্র, নাটক ও ওয়েব সিরিজে লাগামহীনভাবে আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড দেখানো হচ্ছে। নায়ক, পার্শ্বনায়ক ও ভিলেন—প্রায় সবাইকে ধূমপান ও মাদক সেবন করতে দেখা যায়। তরুণরা এসব বিকৃত ও অসুস্থ কনটেন্ট দেখে উপকৃত না হয়ে বরং মাদকাসক্তি ও নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সুস্থ ও সচেতন বিনোদনের চর্চা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।
আরটিভি/এআর