সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আইন বিভাগের স্নাতক ৩৩তম ব্যাচ ও স্নাতকোত্তর ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৪১৭ নম্বর কক্ষে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. রফিকুল আলম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুভ সূচনা করা হয়। এরপর মাইলস্টোন কলেজ ট্রাজেডি ও ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারাহ্ ইকবাল বলেন, আজ থেকে নবীনরা আইন পরিবারের একটি অংশ। আইন একটি পরিবার কারণ একই করিডরে আমাদের একসাথে অনেকটা সময় কেটে যায়, জমা হয় অনেক স্মৃতি। পরিবারে যেমন নিয়মকানুন রয়েছে তেমনটা আইন পরিবারেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক এবং অগ্রজদের সম্মান করার উপদেশ থাকবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আইন বিভাগকে অন্যূন উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
নবাগত শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার বাঁধন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আইন বিভাগের একজন নতুন শিক্ষার্থী হয়ে আমি উচ্ছ্বসিত। এখানে রয়েছে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, অনুপ্রেরণাদায়ী অগ্রজ ও বন্ধুত্ব গড়ার নতুন মুখ। চোখ-ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে এমন এক যাত্রা শুরু করছি, যেখানে শিক্ষা মানেই শুধু ডিগ্রি নয়—ন্যায়, বিবেক ও মানবিকতার চর্চা। এই বিভাগে আসার পেছনে শুধু ক্যারিয়ার নয়, ছিল নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়বদ্ধতা। সকলের দোয়া এবং ভালোবাসায় সুশিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য আইনের লড়াই করতে পারি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন, আইন শুধু একটি পেশা নয়, এটি ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়—জন্মের পর থেকেই আমরা এর আওতায় আসি। সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন অপরিহার্য, এটি সভ্যতার ভিত্তি। যারা আইন পড়ে তারাই জানে কীভাবে আইন রক্ষা বা ভঙ্গ হয়—তাই তাদের দায়িত্ব আরও বেশি। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকেই তোমরা এই পরিবারের স্থায়ী সদস্য, এটি তোমাদের সারাজীবনের পরিচয়। তোমরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরীর মূল্যবোধ ধারণ করো এবং কোনো কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকো। আইনের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার দায়িত্ব এখন তোমাদের কাঁধে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পড়াশোনা নিজের কাছে, দায়বদ্ধতা আর ক্যারিয়ার গড়তে হলে উচ্চশিক্ষা অপরিহার্য। কিন্তু যদি আইন পড়েও আইন ভঙ্গ করো, তাহলে সমাজে ন্যায়ের বার্তা যাবে না। বর্তমানে আমাদের দেশে এমন আইনি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যেখানে মানুষ পুলিশের কাছে জিডি করতেও বা আইনজীবীর কাছে যেতে ভয় পায়। তাই নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান—তোমরাই ভবিষ্যতের ভরসা, এমন একটি শক্তিশালী ও ন্যায়ভিত্তিক আইন ব্যবস্থা গড়ো, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে বিচার পাবে।
সমাপনী বক্তব্যে বিভাগীয় প্রধান মো. রফিকুল আলম বলেন, আইন মানুষকে সঠিক পথে রাখে কিন্তু নৈতিকতা না থাকলে আইনও ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রের সকলের নৈতিকতার শিক্ষা থাকলে আইন লঙ্ঘন করতো না। মানবজীবনের সৃষ্টি থেকেই এই হত্যা চলে আসছে। আইন হলো ব্যাপক জিনিস সমুদ্রের মতো, যাতে কেউ বলতে না পারে তার আইন পড়া শেষ হয়ে গিয়েছে। আইনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আইন এমন এক ধরণের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা অধিকার ফিরে পাই। আমাদের আমি চাই সবাই উগ্রতা কম করে, সুন্দর মতো জীবনযাপন করা উচিত।
অনুষ্ঠানে নবীনদের ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা। আলোচনা পর্ব শেষে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আরটিভি/এএএ