বিদেশি লেবেল, নামের বানানের কারসাজি এবং নামিদামি ব্র্যান্ডের মতো আকর্ষণীয় মোড়ক ব্যবহার করে দেদারসে চলছে প্রসাধনী পণ্যের বেচাকেনা। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন না থাকলেও বিক্রেতাদের দাবি, বেশিরভাগই আমদানি করা চীনা পণ্য।
বিএসটিআই ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না নকল প্রসাধনী পণ্যের বিক্রি। তাই আসল পণ্য কিনতে ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ তাদের।
পুরান ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে দোকানগুলো ফাউন্ডেশন, আইশ্যাডো, সিরাম থেকে সানস্ক্রিন ও সাজসজ্জার প্রয়োজনীয় প্রসাধনী পণ্য দিয়ে ঠাসা। প্রথম দেখাতে মনে হবে নামিদামি কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য এগুলো। তবে একটু খেয়াল করলেই ধরা পড় নামের বানানের কারসাজি।
একটি বর্ণের হেরফের করে যেমন বানানো হচ্ছে নতুন নাম; তেমনি ডিজাইনও করা হয়েছে প্রায় হুবহু বিদেশি ব্র্যান্ডের আদলে। কোনোটিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখসহ রয়েছে বিএসটিআইয়ের সিল। আবার কোনোটিতে নেই এসবের কোনো তথ্যই।
পণ্যের গায়ে লেখা নাম সরকারি অনুসন্ধান সংস্থা বিএসটিআই জানায়, অনুমোদন নেই কোনোটিরই। মানহীন এসব পণ্যের বিক্রি বন্ধে গত অর্থবছরে ৬২টি অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন কৌশলের কাছে হার মানতে হচ্ছে বলে জানান বিএসটিআইর পরিচালক (সিএম) মো. সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, যারা আমদানি করছে বা অবৈধ উপায়ে দেশে পণ্য আনছে, তাদের ধরতে পারলে সব পণ্য জব্দ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেত। তবে তারা এসব পণ্য এনেই দোকানে দিয়ে দেয়। তাই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। আর একটি দোকানে অভিযান পরিচালনার সময় অন্য দোকানগুলো এসব পণ্য লুকিয়ে ফেলে।
বিএসটিআইয়ের অভিযানে ৬৭টি মামলা করার পাশাপাশি সিলগালা করা হয়েছে দুইটি প্রতিষ্ঠান। ৫০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের নকল কসমেটিকস, পণ্যের বোতল, লেবেল ধ্বংস করার পাশাপাশি আদায় করা হয়েছে ২৬ লাখ টাকার বেশি জরিমানা।
এদিকে এসব নকল পণ্যের বাজার রোধে তৎপর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও। গত জুন পর্যন্ত এক বছরে প্রসাধনী ও স্কিন কেয়ার পণ্যে ভেজালবিরোধী ৭৪৪টি অভিযান করেছে সংস্থাটি। জরিমানা করেছে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা।
ভেজালের অভিযোগ এসেছে ৫৮৩টি; যার মধ্যে সমাধান হয়েছে ৪৩৩টি। নকল পণ্য থেকে বাঁচতে প্রসাধনী কেনার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের যাচাইবাছাই করার পরামর্শ সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের।
তিনি বলেন, প্রসাধনী পণ্যে নকল ও ভেজালের ঝুঁকি বেশি হওয়ায় এই ক্ষেত্রে ভোক্তাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। ভোক্তাকে যাচাই-বাছাই করে সেরা ও আসল পণ্যটি বেছে নিতে হবে। কারণ না বুঝে না দেখে পণ্য কিনলে ঠকার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই নিশ্চিত হয়ে পণ্য কিনতে হবে।
আরটিভি/ এসআর