যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোর আলোচনায় বাংলাদেশ কূটনৈতিক দিক থেকে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির।
রোববার (২০ জুলাই) ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শরীফ জহির বলেন, তবে এখনও কিছুদিন সময় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সরকারপ্রধানের যত ধরনের যোগাযোগের উৎস আছে, সব কাজে লাগিয়ে শেষবারের মতো চেষ্টা করা উচিত।
আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক না কমলে আমাদের ব্যবসা ছয় মাসের বেশি টিকতে পারবে না। এর ফলে আমাদের ১০ লাখের বেশি মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলোও আমাদের পোশাকের দাম কমাতে চাপ তৈরি করবে।
অনন্ত গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত ও ভিয়েতনামের ওপর পাল্টা শুল্ক যথাক্রমে ১১ শতাংশ ও ২০ শতাংশ নামিয়ে এনেছে। ইন্দোনেশিয়ার ওপর শুরুতে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও তা আলোচনার মাধ্যমে কমিয়ে এখন ১৯ শতাংশ করেছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কহারে অসামঞ্জস্য থাকলে সেটি আমাদের ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে যে বড় পরিসরে আলোচনা হবে, সেটা তো কূটনৈতিক পর্যায়ের ব্যাপার। মার্কিন কূটনীতি ও লবি গ্রুপের কাছে এই জিনিসটা খুবই স্বাভাবিক ও প্রচলিত। বাংলাদেশও এটা ব্যবহার করে আসছে।
শরীফ জহির বলেন, অতীতে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলোও এমন কাজ করেছে। এ বিষয়ে শুরুর দিন থেকেই আমাদের এ ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত ছিল।
লবি গ্রুপ ছাড়া এই পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয় জানিয়ে অনন্ত গ্রুপের এমডি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে যদি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সক্রিয়ভাবে কিছু করতে পারে, তাহলেই এটা সম্ভব হতে পারে। সেটাই এখন আমাদের জন্য একমাত্র সম্ভাব্য পথ।
বিদেশি ক্রেতাদের পোশাক কেনার জন্য একটা মৌসুমভিত্তিক বাজেট থাকে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যখন বিদেশি ক্রেতারা দেখবে যে পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশ থেকে কম পণ্য কিনতে পারছে, তখন তারা বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ কমিয়ে ফেলবে। হয়তো এক দিনে বন্ধ করতে পারবে না, তবে ধীরে ধীরে ক্রয়াদেশ কমাবে। এ সময় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ভারত তাদের এই খাতের সক্ষমতা বাড়িয়ে ফেলবে। এর ফলে এখন আমাদের ওপর প্রভাব না পড়লেও পরবর্তী মৌসুমে বাংলাদেশে তাদের ক্রয়াদেশ অনেকটাই কমে যাবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ ভাগ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে।
আরটিভি/আইএম