১৯ ঘন্টা পর নতুন জীবন পেল শিশু তানিশা

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০১৭ , ০৫:৩৮ পিএম


১৯ ঘন্টা পর নতুন জীবন পেল শিশু তানিশা

'১৯ ঘন্টা পর নাতনিরে ফিইরা পাইছি। আল্লাহর কাছে লাখো শোকর। আমার নাতনিরে সুস্থ অবস্থায় ফিইরা পাইছি। নাতনির লাইগা ১৯ ঘন্টা খাওয়া দাওয়া ছাইড়া দিছিলাম।' অশ্রুসজল চোখে এসব কথাগুলো বলছিলেন শিশু মাহমুদা সুলতানা তানিশার সত্তরোর্ধ্ব দাদা নিজাম উদ্দীন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কলেজরোড চৌধুরীপাড়ার প্রেমতলা এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় ১৯ ঘন্টা আটকে থাকার পর নাতনিকে ফিরে পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, 'আমাগো পরিবারের কাছে সময়ডা ছিল কষ্টের-বেদনার। ওরে ফিইরা পাইছি, এইডাই শান্তি। আমাগো নাতনি আবার স্কুলে যাইতে পারবো, দুষ্টুমি করবো। এ্যার চাইতে বড় শান্তি আর কী অইতে পারে।' 

নাতনিকে কোলে তুলে মুখে অনবরত চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছিলেন ১৯ ঘন্টা জঙ্গি আস্তানায় আটকে থাকার ঘটনা। কিন্তু কোনো কথায় বের করা যাচ্ছিল না। তানিশা ভয় আর আতঙ্কে ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছিল আশেপাশের শতশত মানুষের দিকে।

বিজ্ঞাপন

ছোট্ট এ শিশুটির দু'চোখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। মুখে ছিলনা কোনো কথা। দাদার কথারও কোনো উত্তর দিতে পারছিলনা। গনমাধ্যম কর্মীরাও ঘিরে ধরেছিল তানিশাকে। জানতে চেয়েছিল ভীতিকর সে ঘটনার কথা। নির্বাক তানিশা কেবল মুখ লুকানোর চেষ্টায় বলে দিচ্ছিল ১৯ ঘন্টার সেই সময়টা তার জন্য কতো ভয়ঙ্কর। 

দাদা নিজাম উদ্দীন বারবার বলছিলেন, 'আল্লাহ আমার সোনামানিককে ফিরাইয়া দিছে। কোন অভিযোগ নাই আমার। সন্তান ফিইরা আইছে। আল্লাহর কাছে শোকর জানাই, আলহামদুলিল্লাহ। উনিশডা ঘন্টা কত যে চিন্তায় ছিলাম তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। আর কারো জীবনে যেনো এমন ঘটনা না ঘটে।' কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন নিজাম উদ্দীন।

১৫ মার্চ সীতাকুন্ড থানাধীন কলেজ রোড চৌধুরী পাড়া প্রেমতলা এলাকায় ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। বিকাল ৪টার দিকে দ্বিতল ভবনের এ বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের ওপর বোমা ছুঁড়ে জঙ্গিরা। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হয় সীতাকুন্ড থানার ওসি- তদন্ত মোজাম্মেল হোসেন। রাতে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেলেও জঙ্গি আস্তানায় প্রবেশ করেনি ওই বাড়ি ঘিরে রাখা আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। 

বিজ্ঞাপন

এরপর চট্টগ্রাম পুুলিশের সোয়াত টিম ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যসহ স্থানীয় পুলিশ ও র‌্যাবের সহযোগিতায় ১৫ ঘণ্টা পর ভোর ৬টায় অভিযান চালিয়ে ওই বাড়িতে আটকে থাকা তানিশাসহ প্রায় ১৪জনকে নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অভিযান চলাকালে ২ জঙ্গি পুলিশের গুলিতে মারা গেলেও আত্মঘাতি বোমা হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ২ জঙ্গির দেহ।

বিজ্ঞাপন

১৫ মার্চ বুধবার বেলা দু'টার দিকে প্রতিদিনের মতো এ ভবনের নিচতলায় এক শিক্ষকের কাছে পড়তে যায় দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তানিশা। ভবনের নিচতলায় আরেকটি ইউনিটে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানের সময় আটকা পড়ে অবুঝ এ শিশুটি। এত ছোট্ট বয়সে বিচিত্র ও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯ ঘন্টা পর নতুন জীবন ফিরে পায় তানিশা। 

এসজে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission