রিমান্ডে বেরিয়ে এলো শিমু হত্যার মূল কারণ 

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২ , ১২:৩৩ পিএম


The main reason for Shimu's murder came out in remand
অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু ও তার স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল।। ফাইল ছবি

হত্যার শিকার অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদের ৩ দিনের রিমান্ড চলছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) তাদের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) তাদের রিমান্ড শেষ হবে। রিমান্ডে তারা হত্যার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পরস্পরকে সন্দেহ করতো। এ থেকে দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝিই অভিনেত্রী শিমু হত্যার মূল কারণ বলে এখন পর্যন্ত তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

যা বলছেন ওসি

মামলা তদন্তের বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালাম বলেন, নোবেল ও তার বন্ধুকে ৩ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নোবেল অকপটেই স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করছেন।  

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল দাবি করছেন, স্ত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তার। ঝগড়ার একপর্যায়ে থাপ্পড়, এরপর গলা চেপে ধরলে শিমু নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝি

বিজ্ঞাপন

তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি চলছিল, তা এখনও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। কারণ, রিমান্ডে একেক সময়ে একেক রকম বিষয় তুলে ধরছেন নোবেল। তবে, এর মধ্যে ‘চারিত্রিক স্খলন’ অন্যতম। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুইজন দুইজনকে সন্দেহ করতেন, যে পরিস্থিতিতে তাদের দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ ক্রমেই বেড়ে যায়।

শিমুর স্বামী নোবেল পুলিশের কাছে জানিয়েছেন বন্ধু ফরহাদের সহায়তায় কীভাবে মরদেহ গুমের চেষ্টা করেছেন।

রিমান্ডে থাকা নোবেলের বন্ধু ফরহাদ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, হত্যার আগে তিনি কিছুই জানতেন না। বন্ধুর ফোনে সাড়া দিয়ে ওই বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। এর বেশি কিছু আর বলছেন না ফরহাদ।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল দাবি করেছেন, স্ত্রী শিমুকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল না তার। সকালে দুইজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে তিনি শিমুকে থাপ্পড় দেন। এতে শিমু তার ওপর চড়াও হন। ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুর গলা চেপে ধরলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর বন্ধু ফরহাদকে বাসায় ডোকে স্ত্রীর লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন নোবেল।

ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু একটা করার চাপ ছিল

ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলে নোবেল পুলিশকে জানায়, তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি চলছিল। কিছু বিষয় নিয়ে তিনি স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন, স্ত্রীও তাকে সন্দেহ করতেন। এছাড়া গাড়ির যন্ত্রাংশের পুরোনো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু একটা করার চাপ ছিল তার ওপর। এসব নিয়েই তাদের মধ্যে দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ চলছিল।

হত্যার সময়ে পাশের কক্ষেই ছিল দুই সন্তান

পুলিশ সূত্র জানায়, শিমু-নোবেল দম্পতির ১ ছেলে এবং ১ মেয়ে। মেয়ে ‘ও’ লেভেলে অধ্যয়নরত, যার বয়স ১৭ আর ছেলের বয়স ৫ বছর। হত্যা করার সময় ওই ফ্ল্যাটেই ছিল তাদের ছেলে-মেয়ে। ঘটনার সময় তারা পাশের কক্ষেই ঘুমিয়ে ছিল। হত্যার পর বাসা থেকে বস্তায় ভরে লাশ বের করা হলেও তারা কিছু টের পায়নি।

শিমু মারা গেছেন বোঝার পর নোবেল বাসায় বন্ধু ফরহাদকে ডেকে আনেন। ছেলে-মেয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাশটি সরাতে চেয়েছিলেন তিনি। মেয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, শনিবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে ভাইবোন মিলে একটি কক্ষে ঘুমিয়ে যায়। তাদের ঘুমের মধ্যেই ঘটনা ঘটলেও তারা কিছু বোঝেনি। রোববার (১৬ জানুয়ারি) দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার পর তারা বাসায় মা-বাবা কাউকেই দেখতে পায়নি।

সিসিটিভি অকেজো করতে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন

নোবেল আর ফরহাদ মিলে শিমুর মরদেহ বাসা থেকে বের করার আগে বাসার দারোয়ানকে নাশতা আনতে পাঠানো হয়।  

এর আগে, তারা বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো করতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একপর্যায়ে বিদ্যুতের মূল সুইচও বন্ধ করে দেন। পরে বস্তায় ভরা শিমুর মরদেহ গাড়িতে তোলা হয়।

পাটের বস্তা ও প্লাস্টিকের সুতার ব্যবহার

পুলিশ জানায়, রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে ফোনকলে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান।

প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে মরদেহ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা মরদেহ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় মডেল থানার হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩শ’ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭)।

সুতার সূত্র ধরে বের হয় খুনি

মরদেহ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করে পুলিশ।  ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

নিজে বাঁচতে জিডি কৌশল নিয়েছিলেন নোবেল

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শিমুকে না পাওয়ার কথা উঠলে স্বামী নোবেল দাবি করেন, তার স্ত্রী সকালে বাসা থেকে বের হন, এরপর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন রাতেই নোবেল কলাবাগান থানায় স্ত্রীর সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। তবে সেই জিডি তার কোনো কাজে আসেনি।

কেএফ/এসকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission