ভারী বর্ষণে শ্রীপুর পৌরসভার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত মাওনা চৌরাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। নালার নোংরা পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গণপরিবহনের সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। বিকেলের দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ন্যূনতম নাগরিক সেবা না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পৌরবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শনিবার (২ আগস্ট) বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি শুরু হলে চৌরাস্তার আশপাশের এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
মাত্র দেড় ঘণ্টার বৃষ্টির পানি নামতে লাগে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পৌরবাসী। দীর্ঘদিনেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। কয়েক বছর ধরেই চলছে এই দুরবস্থা, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থেকে যাচ্ছে উদাসীন। ফলে বাধ্য হয়েই মাওনা চৌরাস্তার এমন দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই চলাচল করছেন পৌরবাসী। যদিও সমস্যা সমাধানে বর্ষার আগেই ড্রেন পরিষ্কারের কথা জানিয়েছেন পৌর প্রশাসক।
পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌর কর, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু সনদসহ প্রতিবছর নানা খাতে শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। অথচ নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হচ্ছে এমন নাজুক পরিস্থিতি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন পৌরবাসীসহ যাত্রী, চালক ও পথচারীরা। শিল্প অধ্যুষিত শ্রীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৮১টি মৌজায় প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌরসভার বাণিজ্যিক এলাকা ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিড়ম্বনায় যাত্রী, চালক ও পথচারীরা। ক্রেতার উপস্থিতি কমে যাওয়ায় হ্রাস পেয়েছে বিক্রিও। ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে তাদের বিকেলের বাজারে কেনাবেচা একবারেই হবে না।
পোশাকশ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, সড়কের দুই পাশে পানি বৃষ্টির পানি জমে মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচ পর্যন্ত এসে গেছে। সড়কের হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলাম। আধা ঘণ্টা ধরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পানি ও বৃষ্টির কারণে রিকশা মিলছে না।
পথচারী জামাল উদ্দিন বলেন, মাওনা চৌরাস্তায় পানি জমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ডুবে গেছে। সড়কে পানি এমনভাবে জমে রয়েছে যেন নৌকাও চলতে পারে। চারদিকে শুধু পানি থইথই করছে, অলিগলি, বাসাবাড়ী সবখানে পানি।
শিক্ষিকা আফরোজা আক্তার রুনা বলেন, ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তাই পানি সরতে পারছে না। এগুলো যদি পৌরসভার লোকজন না দেখে, তাহলে আমরা ভয়াবহ বিপদে পড়ে যাব।
অটোরিকশাচালক উজ্জল মিয়া বলেন, বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ভোগান্তির শেষ নেই। চলাচল করাই এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।
ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারের কাপড় ব্যবসায়ী সেলিম শেখ বলেন, বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, ফলে ক্রেতা কম আসছেন। যার কারণে বিক্রিও কমে গেছে। আমরা ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় আছি।
মাওনা চৌরাস্তার মোবাইল ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক শিহাব খান বলেন, বিকেলের দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে উড়াল সেতুর দুই পাশে হাঁটু পানিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় এসব সড়কের পাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ডুকে পড়েছে। বিকেলে টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট, মার্কেট, বিপণিবিতান সবখানেই মানুষের আনাগোনা কম ছিল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বৃষ্টি কমলে জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
মাওনা চৌরাস্তার বাসিন্দা এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাওনা চৌরাস্তার জলাবদ্ধতা নতুন নয়। অন্তত দুই দশক ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলজটে জনদুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকা সরু নালা বছরের বেশির ভাগ সময়ই আবর্জনায় ভরে থাকে। অনেক স্থানে নালা ভেঙ্গে বন্ধ হয়ে রয়েছে। সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানি বের হতে পারছে না। এ এলাকার হোটেল-রেস্তোারাঁর বর্জ্যে নালা প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষা দূরের কথা, শুষ্ক মৌসুমেও নালা উপচে মহাসড়কে পানি চলে আসে।
শ্রীপুর পৌর সচেতন নাগরিক ফোরামের (সনাফ) সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মাসুদার বলেন, এ পৌর শহরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেই গোটা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ নেই। ভারী বর্ষণ হলে ময়লা-আবর্জনায় ভরা নালার নোংরা পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে, দুর্গন্ধ ছড়ায়। পথঘাটে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ে। এ শহর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা নেই। পরিকল্পিত নালা নির্মাণ ও পুরোনো নালা সংস্কার ছাড়া জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে শহরবাসীর মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
শ্রীপুর পৌর সচেতন নাগরিক ফোরামের (সনাফ) সভাপতি রওশন হাসান রুবেল বলেন, পৌরবাসী কর দিয়ে নাগরিক সুবিধা পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতে পৌরসভায় জলাবদ্ধতা এটা কাম্য নয়। সবার একটাই প্রত্যাশা শিগগিরই আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে এ জলাবদ্ধতা থেকে যেন পৌরবাসীকে মুক্তি দেওয়া হয়।
শ্রীপুর পৌরসভার প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, বর্ষার আগেই আমরা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করেছি। দীর্ঘদিন পর বেশি সময় ধরে ভারী বর্ষণ হওয়ায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। হয়তবা ২ বা ৩ ঘণ্টার মধ্যে পানি সরে যাবে।
তিনি বলেন, নিয়মিত নালা পরিষ্কার রাখতে পৌরসভা থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ড্রেনের মুখ বিভিন্ন ময়লা, আবর্জনা ফেলে যদি বন্ধ করে না রাখে তাহলে এ পানি জমে থাকার কথা না। ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের একটু সচেতন হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি।
আরটিভি/এফএ