আবু বকর মোল্লা ছিলেন নবম শ্রেণির মাদরাসাছাত্র। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন তাকে উদ্বেলিত করেছে। এতে পরিবারের অজান্তেই প্রতিদিন যোগ দিয়েছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। ছাত্রদলের নেতৃত্বে যোগ দিতেন সভা সমাবেশে। সবশেষ ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় তার মাথার খুলি ভেঙে যায়। ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখনো চিকিৎসাধীন আবু বকর। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন এ তরুণ। তাকে চিকিৎসা করতে করতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার শাকতলা গ্রামের আবুল খায়ের মোল্লার ছেলে মাদরাসাপড়ুয়া আবু বকর মোল্লা পার্শ্ববর্তী ধামতী আলিয়া মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ায় ২০ জুলাই থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে যোগ দিতেন মিছিল সমাবেশে।
সবশেষ ৪ আগস্ট ছাত্রদলের ব্যানারে একটি মিছিল ছোট আলমপুর থেকে নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে কালাচাঁন মার্কেটের সামনে এলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার কবলে পড়ে। এ সময় কুপিয়ে আবু বকর মোল্লার মাথার খুলি ভেঙে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানে একমাস চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কুমিল্লা আসার আগ মুহূর্তে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত কুমিল্লা ট্রমা হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৬ দিন আইসিউতে থাকার পর তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালের নিউরোলজি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ব্রেইনের অপারেশন করে টানা দুই মাস ফের তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অর্থাৎ পুরো বছরই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই আহত যোদ্ধা।
বর্তমানে তার জ্ঞান ফিরলেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন এই শিক্ষার্থী। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে চিকিৎসা করতে করতে তার পরিবার এখন অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে গেছে। জুলাই ফাউন্ডেশনসহ রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। অপরদিকে ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ৭২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি স্বজন এবং এলাকাবাসীর। জুলাই আন্দোলনে আহত মানসিক ভারসাম্যহীন আবু বকর মোল্লার পরিবারের পাশে দাঁড়াবে সরকার-এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
আহত ওই যোদ্ধার বাবা আবুল খায়ের মোল্লা বলেন, আমার ছেলে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। সে কাউকে চিনতে পারে না। আমরা হাল ছাড়িনি।আমি সব সম্পদ বিক্রি করে হলেও আমার ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যাব। ইতিপূর্বে অনেকেই আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু যে সহায়তা পেয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আমি এখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।
শাকতলা এলাকার বাসিন্দা সুমন আহমেদ বলেন, আবু বকরকে চিকিৎসা করাতে করাতে তার পরিবার একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। উন্নত চিকিৎসা ছাড়া তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খাঁন বলেন, আহত আবু বকর মোল্লার চিকিৎসার খোঁজখবর আমরা নিয়েছি। তার বিষয়টি আমাদের নলেজে রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোনো সহায়তা এলে ভিকটিম পরিবারের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।
আরটিভি/এএএ