সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বড়ধুল হাটের পাশে বসে আছেন প্রায় শতবর্ষী বৃদ্ধ ইসহাক আলী। পুরোনো চেক লুঙ্গি ও মিষ্টি রঙের পাঞ্জাবি পরা এই বৃদ্ধের বয়সের ভারে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই কষ্ট হয়। তবু সংসার চালাতে সপ্তাহের সোমবারের হাটে নিয়ে আসেন ২৫০ গ্রাম ওজনের ২৫ থেকে ৩০টি গুঁড়া হলুদের প্যাকেট।
চরকুড়া গ্রামের মৃত বাবর আকন্দের ছেলে ইসহাক আলী স্বাধীনতার আগেই হলুদের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। একসময় ভারত থেকে এক টাকা মণ দরে হলুদ কিনে দেশের হাটে হাটে খুচরা বিক্রি করতেন। এখন বয়সের কারণে শুধু নিজের এলাকায় সীমিতভাবে বিক্রি করেন।
সম্প্রতি বড়ধুল হাটে কথা হয় তার সঙ্গে। ক্লান্ত মুখে ধীরে ধীরে বলেন, জন্মের পর থেকেই কষ্ট করছি, কখনো সুখ-শান্তি পাইনি। শরীর ভালো নেই, সবসময় অসুখ লেগেই থাকে।
ইসহাক আলীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ছেলে তেমন খোঁজ নেন না বলে অভিযোগ তাঁর। স্ত্রীও অসুস্থ এবং চলাফেরা করতে অক্ষম। ইসহাক আলী বয়স্ক ভাতা পেলেও স্ত্রী কোনো ভাতা পান না।
আক্ষেপের সুরে বলেন, বউয়ের তো চলার মতো শরীর নাই, তারপরও কোনো ভাতা দেয় না।
স্থানীয় দুলাল হোসেন জানান, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখি ইসহাক আলী সোমবারের হাটে হলুদ বিক্রি করেন। দিনে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৫০ টাকার হলুদ বিক্রি করতে পারেন। সরকারিভাবে এ পরিবারকে সহযোগিতা করা দরকার।
এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোতালিব বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ওই বৃদ্ধের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।
শতবর্ষী এই মানুষটির জীবনসংগ্রাম স্থানীয়দের মনে দুঃখের পাশাপাশি সহানুভূতির জন্ম দিয়েছে। বয়সের ভার, অসুস্থতা ও অভাবের মাঝেও সংসারের হাল ধরে রাখতে তাঁর এই লড়াই অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
আরটিভি/এমকে -টি