ঝালকাঠিতে হত্যা মামলায় সাক্ষীকে আদালত চত্বরে হাতুড়ি পেটা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ০৯:৪৮ পিএম


ঝালকাঠিতে হত্যা মামলায় সাক্ষীকে আদালত চত্বরে হাতুড়ি পেটা
ছবি: আরটিভি

ঝালকাঠিতে হত্যা মামলায় সাক্ষী দিয়ে ফেরার পথে আদালতের প্রধান ফটকের সামনে সাবেক এক ইউপি সদস্যকে হাতুড়ি পেটা করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বিরুদ্ধে। 

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী ব্যক্তি হলেন- নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মন্নান মৃধা ওরফে চুন্নু (৫২)। তিনি উপজেলার কয়া গ্রামের মৃত হাতেম মৃধার ছেলে। 

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় ঝালকাঠি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ভুক্তভোগী আবদুল মন্নান মৃধার আহত অবস্থায় জবানবন্দী গ্রহণ করে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামানকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহেব হোসেন। 

আদালত সংশ্লিষ্ট জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে নলছিটি উপজেলার কয়া গ্রামের একটি ব্রিকফিল্ডের সামনে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রুবেল গাজী (২২) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়। আহত হওয়ার ২১ দিন পর ৪ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রুবেল গাজীর বাবা জসিম গাজী ১৮ জনকে আসামি করে নলছিটি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আজ সাক্ষীর জন্য ধার্য ছিল। সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মন্নান মৃধা ওরফে চুন্নু আদালতে সাক্ষী দিয়ে আসামিদের হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে প্রধান ফটকের সামনে হাতুড়ি দিয়ে সাক্ষী মন্নান মৃধাকে মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এতে মন্নান মৃধা গুরুতর আহত হন। এ সময় তিনি নিজের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। আসামিরা মোটরসাইকেলটি ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরে আদালত পাড়ার বিচার প্রার্থীরা এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় মন্নান মৃধাকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে নিয়ে যান। ঘটনার পর অভিযুক্ত আসামিরা পালিয়ে যান। পরে জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ভুক্তভোগী মন্নান মৃধার কাছ থেকে এ ঘটনার বিস্তারিত জবানবন্দী গ্রহণ করেন। 

বিজ্ঞাপন

নলছিটি থানা পুলিশ রুবেল হত্যা মামালাটি তদন্ত করে চলতি বছরের ৩ মে ১২জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দায়ের করেন। আসামিরা হলো, অহিদুল ইসলাম মৃধা (২৭), মো. রফিক মৃধা (৩২), সোহেল মাঝি (৩৬), সাইদুল ফকির (২৩), মো. সালাম ফকির (২৩), এনায়েতুর রহমান (৪৬), কালাম খান (৩২), নাসির খান (৪৮), মো. এরশাদ হাওলাদার (৩০) মো, রবিউল হাওলাদার (২০), মো. বাবুল মৃধা (৪৭) ও মো. সোহরাব মৃধা (৪৫)। মামলাটি চুড়ান্ত সাক্ষীর জন্য চলমান আছে। 

বিজ্ঞাপন

আহত আবদুল মন্নান মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আদালত পাড়ায় সাক্ষী দিতে এসেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। রুবেল গাজী হত্যা মামলায় আসামিদের চিহ্নিত করে আজ আমি আদালতে সাক্ষী দিয়েছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত জখম করে। এমন কি আসামিরা আমার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় আমি বিচার চাই। 
মামলার বাদী জসিম গাজী বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এখন মামলার সাক্ষীকেও হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে চায়। 

ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহেব হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। মন্নান মৃধা আদালতে সাক্ষী দিয়ে আসামিদের চিহ্নিত করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানার ওসিকে দ্রুত মামলা নেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন। 

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান, আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। এ ঘটনায় দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission