শহীদ রুবেলের পরিবার

কাউকে দেখলে হাউমাউ করে কাঁদেন মা এবং স্ত্রী

আবুল খায়ের, কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫ , ০৮:২০ এএম


কাউকে দেখলে হাউমাউ করে কাঁদেন মা এবং স্ত্রী
কুমিল্লার দেবিদ্বারে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী ও মা। ছবি: আরটিভি

কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের পরিবারে হতাশা কাটেনি। সরকারি বেসরকারি অনুদানে পরিবারের ডালভাতের ব্যবস্থা হলেও একমাত্র অভিভাবক ও উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে শহীদের মা এবং স্ত্রী। বছর ঘুরে জুলাই আসলেও স্বজনহারা ওই পরিবারে এখনো ছন্দ ফেরেনি। রুবেলের বাড়িতে গণমাধ্যম কর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তা সহ কেউ খোঁজ নিতে গেলেই মা এবং স্ত্রী দুজনেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। পরিবারটিতে গেলে দেখা যায় স্বজন হারানোর সার্বক্ষণিক শোক। 

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আব্দুর রাজ্জাক রুবেল। শহীদ রুবেলের মেয়েটার বয়স পাঁচ বছর চলছে, সে এখনও জানে না তার বাবা কোথায়।

রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার বলেন, মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। অনেকের বাবা যখন স্কুল থেকে তাদের সন্তানদের নিতে আসে তা দেখে বাড়ি এসে কান্নাকাটি করে আর বলে ‘মা আমার বাবা কোথায়, বাবা আমাকে কেন স্কুল থেকে নিতে আসে না’। আমি বলেছি মা- তোমার বাবা বেড়াতে গেছে এসব বলে বলে আর কত তিন সান্ত্বনা দেব?। জুলাই তো ঠিকই আসছে কিন্তু আমার স্বামী তো আসলো না। আমি না পেলাম স্বামীকে না পেলাম স্বামীর হত্যার বিচার! আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। ছেলেটা এখন বাবা বাবা বলে ডাকে। আমি কি করে এই শোক ভুলব। 

বিজ্ঞাপন

হ্যাপি আক্তার বলেন, আমার স্বামী বাস চালাতেন, তার তো কোন শত্রু ছিল না, তাকে গুলি করছে আবার কুপিয়ে মাথা আলাদা করে ফেলেছে, শুধু গুলি করলেও আমার স্বামী বাঁচত। তাকে যে যেভাবে পারছে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করছে। একবারও মায়া লাগেনি তাদের। 

শহীদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমার স্বামীকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তারা জামিনে বের হয়ে আবার প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে পুলিশ আসামী ধরছে কিন্তু বিচারক তাদের জামিন দিচ্ছে কেন? তাহলে কি আমি কোনদিনও স্বামীর হত্যার বিচার পাব না? 

হ্যাপি আক্তার বলেন, আমার স্বামী যখন মারা যায় তখন আমার শূন্য হাত ছিল, থানা থেকে তার লাশ বাড়িতে আনব সে টাকাটাও ছিল না। আমার স্বামী মারা যাওয়ার এক মাস পর আমার একটি ছেলে সন্তান হয়। আজ ছেলেটা বাবা বাবা (অস্পষ্ট) বলে ডাকে। সে যদি বড় হয়ে তার বাবাকে খুঁজে আমি কি জবাব দেব ? সরকার যেটুকু সাহায্য করেছে তা দিয়ে চলতেছি, বাচ্চার ওষুধ, সংসারের খরচ চলে।     

বিজ্ঞাপন

শহীদ রুবেলের মা হোসেনেরা বেগম আহাজারি করে বলেন, আমার একটাই ছেলে ছিল। তার রোজগারে চলতো আমাদের সংসার। আমার একমাত্র বুকের ধন ছিল তারা কেড়ে নিল। আমার সংসারটা সে আগলাইয়া রাখত। চার মেয়ের পর আমার এ ছেলেটা হইছে। ছোট বেলায় তার বাবা মারা যায়, আমি কষ্ট করে ছেলেকে পালছি কি সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করতে? আহারে আমার মানিক চানের দম যেন কেমনে বের হইছে? এক বছর হইয়া গেল আমার মানিক চান আমারে মা বলে ডাক দেয় না। রাস্তা ঘাটে কত মানুষ দেখি আমার রুবেলরে দেখি না। আন্দোলনের সময় মানুষ বলাবলি করছিল কারা যেন রুবেল নামে একজনে গুলি কইরা মারছে আমার কানে যখন এ খবর আসছে আমি ভাবছিলাম অন্য কোন রুবেল হবে কিন্তু এই রুবেল যে আমার রুবেল আমি তো বুজি নাই বাবা। মারা যাওয়ার দিন দুপুর বেলা আমাকে ফোন করে বলে আমি ভাত খাব হ্যাপিরে বলো ভাত রেডি করতে। আমি তো ছেলের জন্য ভাত রেডি করে বসে ছিলাম। সে আসবে এক সাথে ভাত খাব। কিন্তু ছেলে তো আসলো লাশ হয়ে।
  
কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, তাকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করল সে সকল সন্ত্রাসীরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। শহীদ রুবেল কোন দল করে তা দেখার বিষয় না তাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। জুলাই আন্দোলনের এক বছর চলছে কিন্তু দৃশ্যমান কোন বিচার হয়নি। আমরা সরকারের কাছে জুলাই আগস্ট আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার দাবি করছি।  

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ওই সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি, পরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  

আরটিভি/এএএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission