নিশ্ছিদ্র নীল আকাশ। তার বুকে হঠাৎই দেখা গেল এক চকচকে হেলিকপ্টার। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে সেটি নেমে এল চুয়াডাঙ্গার জীবননগর হাই স্কুল মাঠে। চারদিকে উৎসুক জনতার ভিড়। কিছুক্ষণ পর হেলিকপ্টার থেকে নামলেন লাল শেরওয়ানিতে সজ্জিত এক তরুণ বর—সৌদি প্রবাসী শাকিব হোসেন। বয়স ২৩। হেলিকপ্টারে চড়ে আসা এই বরের চোখেমুখে তখন আনন্দ আর গর্ব—কারণ, তিনি শুধু নিজের বিয়েতে নয়, বাবার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ করতেই এভাবে স্ত্রীকে তুলে নিতে এসেছেন।
শাকিবের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গাড়াপোতা গ্রামে। তিনি সৌদি আরবে কর্মরত, তার বাবা বিল্লাল খানও একজন প্রবাসী। ছোটবেলা থেকেই বাবার ইচ্ছা ছিল, তার ছেলের বিয়ে হোক হেলিকপ্টারে করে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই শাকিব এই উদ্যোগ নেন।
মাত্র ৬ মিনিটে আকাশপথ পাড়ি দিয়ে শাকিব পৌঁছে যান জীবননগরের কয়া গ্রামের কনের বাড়ির পাশে অবস্থিত হাই স্কুল মাঠে। সেখানে হেলিকপ্টার অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাঠে ভিড় করে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ স্থানীয়রা। সবাই মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
পরে প্রাইভেটকারে করে কনের বাড়িতে পৌঁছান শাকিব। কনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় তাকে। কনে আসমা খাতুন (১৯) কয়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের মেয়ে। তিনি একটি মাদরাসায় মাওলানা বিষয়ে পড়াশোনা করছিলেন। পাঁচ মাস আগে শাকিব-আসমার বিয়ে হলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীর গৃহে আগমন ছিল আজই।
কনের বাবা ইব্রাহিম খলিল বলেন, “আমার মেয়ের শ্বশুর বিল্লাল খানের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল, ছেলে যেন হেলিকপ্টারে এসে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। সেই ইচ্ছাই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আমরা খুবই খুশি।”
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল ৪টার দিকে কনেকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে নিজ গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন শাকিব। এই অভিনব বিয়ের দৃশ্য এখন পুরো অঞ্চলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবাই বলছে— স্বপ্ন, সাধ্য আর ভালোবাসার মিলন মানেই জীবনের এক অনন্য উৎসব।
আরটিভি/এসকে