বাঁচার আকুতি জানিয়ে যে কথা বলেছিল আব্দুল্লাহ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫ , ১২:১৬ পিএম


চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল আব্দুল্লাহর, বাবার কবরের পাশে শায়িত 
ছবি : সংগৃহীত

সাত মাস আগে প্রবাসে মারা যান বাবা। পরিবার আর সন্তানরা যখন সেই শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনই আরেকটি ঝড় এসে তছনছ করে দিলো গোটা পরিবারকে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মুহূর্তেই ঝরে পড়ে পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য আব্দুল্লাহ ছামীম (১৩)। এ ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্বজনদের।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টা সখিপুরের ডিএমখালী চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকার আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পতির ছেলে আব্দুল্লাহ ছামীম। থাকতেন ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায়। ভাই বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছিল ছামীম। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিল সে। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আগে মাদরাসায় পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তাকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে প্রবাসে মারা যান বাবা আবুল কালাম মাঝি। এরপর থেকে মা, বোন ও বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে আদর যত্নে বেড়ে উঠছিল ছামীম।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিনের মতো সহপাঠীদের সঙ্গে সোমবার (২১ জুলাই) বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিলেন ছামীম। টিফিনের মাত্র ১০ মিনিট বাকি, এরইমধ্যে বিকট শব্দে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। সেই ঘটনায় অন্যান্যদের সঙ্গে গুরুতর আহত হয় ছামীম।

পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মৃত্যুবরণ করে ছামীম।

এ দিকে ছামীমের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে সকাল ৯টায় চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়। ছামীমের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ছেলের মৃত্যুতে কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগমও।

বিজ্ঞাপন

ছামীমের সঙ্গে বেড়ে উঠছিল তার মামাত ভাই আব্দুল্লাহ হুসাইন। গ্রামে এলে তারা দুজন সময় কাটাতো একসঙ্গে। এমনকি ঢাকায় গেলে হুসাইনকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখাত ছামীম। খেলার সাথীকে হারিয়ে কান্না থামছে না হুসাইনের।

বিজ্ঞাপন

ছামীমের মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে ভীষণ মেধাবী ছিল আমার ভাগনে। ওর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। বাবার মৃত্যুর পর ওকে সবাই আগলে রেখেছিলাম। আজ ও আমাদের ছেড়ে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায়। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন এখন স্বপ্নই রয়ে গেল।

এ সময় তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিমান প্রশিক্ষণের জন্য খোলা ময়দান রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম এলাকায় যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল, সেই জায়গায় কীভাবে বিমান প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া হলো। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী বন্যা সরদার বলেন, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, নিহতের সঠিক সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। আমরা চাই, নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ্যে আসুক। এ ছাড়া তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ বের হয়ে আসুক। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সরকার কঠিন পদক্ষেপ নেবে এটাই আশা করি। আর কোনোদিন যাতে এভাবে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।

আহাজারি করতে করতে জুলেখা বেগম বলেন, আমার বাবা (ছেলে) বলেছিল হাসপাতাল এত দূরে কেন। কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না। আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও। আমার বাবা বাঁচতে চাইছিল। কেন আমার বাবা এভাবে চলে গেল।

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আমরা সব সময় থাকবো।

আরটিভি/এমকে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission