পঞ্চগড়ে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ১০:১৭ পিএম


পঞ্চগড়ে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
ছবি: আরটিভি

পঞ্চগড়ের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ চার কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে সংসদের প্রভাব খাটিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় নিয়োগটি বাতিলের দাবি করা হচ্ছে। বিতাড়িত ওই শিক্ষক মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পায়নি। প্রধান শিক্ষকের পদ পেতে এখনো বিভিন্ন দপ্তরে ধন্যা দিচ্ছেন। বিগত সরকারের আমলে প্রতিবাদ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় বর্তমানে ন্যায় বিচার দাবি করছেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম। 

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল দ্বী-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এদিকে বর্তমান প্রধান শিক্ষক বলছেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। খোদ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি আব্দুল আলিমও বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি অবৈধ এবং সাংসদের প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম বিএনপির ট্যাগ দিয়ে স্কুল থেকে লাঞ্ছিত করে বের করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

বিভিন্ন অভিযোগ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জগদল দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রধান শিক্ষক আনারুল হক অবসরে যাওয়ার সময় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষকদের সম্মতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে লিখিতভাবে বিদ্যালয়টির দায়িত্ব দেন। কিন্ত বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা সাদেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এক পর্যায়ে গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাদেকুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেন। 

বিজ্ঞাপন

এ সময় এডহক কমিটি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় জোরপূর্বক ফ্যাসিবাদী কায়দায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজেই ঘোষণা দেন গোলাম মোস্তফা। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফার যোগসাজশে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তৎকালীন পঞ্চগড়-১ আসনের সাংসদ মজাহারুল হক প্রধানের ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রধান সভাপতি পদে আসীন হয়। কিন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কোন নিয়োগ না থাকায় গোলাম মোস্তফাকে প্রধান শিক্ষক দেখিয়ে পাঁচটি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ম্যানেজিং কমিটি। এমপিও নীতিমালা জনবল কাঠামোর তোয়াক্কা না করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রধান অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, আয়া, ল্যাব এসিসট্যান্ট ঝাড়ুদার পদে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এদিকে প্রধান শিক্ষক পদ ফিরে পেতে ২০২৩ সালে সাদিকুল ইসলাম মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ  ২০২৫ সালে ২৮ মে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও আদালতে নিয়োগ বাতিল, কমিটি বাতিল এবং দায়িত্বভার গ্রহণে জন্য তিনটি মামলা করেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। বর্তমানে সাদেকুল ইসলাম নিশ্চয়য় হয়ে আদালত সহ বিভিন্ন দপ্তরে বিচার প্রার্থী হিসেবে ঘুরছেন। 

অন্যদিকে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান জানান, ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করে সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছি তবে শুনেছি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে নিয়োগে। 

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের জানান, আসলে নিয়োগটি সঠিক নিয়ম না মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তৎকালীন সংসদের ভাই প্রায় দশ লাখ টাকার আর্থিক অনিয়ম করেছেন। সে সময় সাদেকুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। স্কুলের বেশ কিছু দোকানের জামানতের টাকা নিয়ে চলে গেছে পূর্বের কমিটি। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, তখন এমন বিগত দিনে কোন নিয়ম না মেনে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ না করার কারণে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক লাঞ্চিত হয়েছিল। পূর্বের কমিটির কারনে বিদ্যালয়টি এখন ঋণগ্রস্থ। বিদ্যালয়ের কক্ষে মাদকাসক্তরা প্রতিনিয়ত মাদক সেবন করে আসছেন।  

অবৈধ নিয়োগ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ম্যানেজিং কমিটি দায়ী। 

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর দাবি অবৈধ নিয়োগটি বাতিল সহ বিভাগীয় তদন্ত করে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলামকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি। 

বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম জানান, আমাকে হটিয়ে দেওয়ার পর অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানের এমপিও ভূক্তির জন্য ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর উপপরিচালক বরাবর নিয়োগের ফাইল প্রেরণ করা হলে সেখান থেকে আনিসুর রহমান সহ নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের ফাইল বাতিল করা হয়। নিয়োগটি অবৈধ ঘোষণা করে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে দাবি করেছেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাদেকুল ইসলম। 

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খায়রুল আনাম মো. আফতাবুর রহমান হেলালি জানান, জগদল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি সদর উপজলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। 

আরটিভি/এএএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission