আটোয়ারীতে ভেজাল জ্বালানি তেলে সয়লাব

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ০৯:২১ পিএম


আটোয়ারীতে ভেজাল জ্বালানি তেলে সয়লাব
ছবি: আরটিভি

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ভেজাল জ্বালানি তেলে সয়লাব হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মাহি পেট্রোল পাম্প থেকে এসব ভেজাল জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। 

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন দীর্ঘ এক যুগ থেকে এই পাম্প থেকে ভেজাল তেলের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। পেট্রোল, ডিজেল থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই তেল ব্যবহার করে অনেকের যানবাহন অল্প সময়ে বিকল হয়ে গেছে। অনেকে বলছেন জ্বালানি তেল মাপেও কম দেয়া হয়। বিগত সরকারের ঠাকুরগাঁও ২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় এই পাম্পে অবৈধভাবে পরিচালিত হতো। ৫ আগস্টের পরে এই পাম্পে ভেজাল তেলের অভিযোগে স্থানীয়রা তাদেরকে সংশোধন হওয়ার তাগাদা দেয়। 

গত জুন মাসে ভেজাল তেল বিক্রির অভিযোগে ভোক্তা অধিকারও পাম্পটিকে জরিমানা করে। কিন্তু তারপরও ভেজাল জ্বালানী তেল বিক্রি বন্ধ হয়নি। পাম্পটির বিস্ফোরক ছার পত্রও নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা পদ্মা ওয়েল কোম্পানির পার্বতীপুর ডিপো থেকে স্যাম্পল সহ ভেজাল মুক্ত জ্বালানি তেল ক্রয় করেন। পরে তা আটোয়ারী এলাকার বিভিন্ন যানবাহন এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। শুক্রবারে তেল কেনার নিয়ম না থাকলেও গভীর রাতে পাম্পের রিজার্ভ ট্যাংকে তেল ভরানো হয়।  

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, মাহি পাম্পে পদ্মা ওয়েলের কোন স্যাম্পল পাম্পে নেই। পাম্প স্থাপনের অধিকাংশ শর্ত পূরণ না করেই পাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে পদ্মা ওয়েল কোম্পানির এ অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএমও আবু শাকিল জানান, পদ্মাওয়েলের কাছে জ্বালানি ক্রয় করার সময় কাঁচের বোতলে স্যাম্পল দেয়া হয় এবং তা পাম্পে রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়। যাতে কোন ভাবে পদ্মা ওয়েলের সুনাম নষ্ট না হয়। শুক্রবারে ডিপো থেকে কোন জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়না। 

স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, আর কোন পাম্প না থাকায় সব সময় এই পাম্প থেকে জ্বালানি তেল নিতে হয়। দীর্ঘদিন থেকে এই পাম্পে অবৈধভাবে ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি বিকল হয়ে যায়। পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এই পাম্পের ভেজাল  তেলে বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে। 

বিজ্ঞাপন

তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল চালক মির্জাপুর এলাকার আব্দুল জব্বার জানান, তেলে অত্যন্ত দুর্গন্ধ। পেট্রোলে তো পেট্রোলের গন্ধ থাকার কথা। এগুলে ভেজাল তেল। পুরাতন আটোয়ারী এলাকার গোপাল চন্দ্র সরকার একই অভিযোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

পাম্পের ম্যানেজার আল আমিন জানান, একই মালিকানার আরেকটি পাম্প ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় রয়েছে। আলি ফিলিং স্টেশন নামের ওই পাম্প থেকে এই পাম্পে তেল পাঠানো হয়। দুটি পাম্পের মালিকই আওয়ামী লীগ নেতা দবিরুল এমপির ছোট ভাই মোহম্মদ আলী। সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম ও তার ছেলে কারাগারে রয়েছে। ভাই মোহম্মদ আলীর নামেও একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি পলাতক রয়েছেন। মোহম্মদ আলীর মেয়ে রুনা আক্তার বর্তমানে পাম্প দুটি দেখা শোনা করছেন। তার স্বামী একজন পুলিশ কর্মকর্তা।  

রুনা আক্তার জানান, ৫ আগস্টের পর আমার পাম্পগুলি ভাঙচুর হয়েছে। তেল লুটপাট করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহাজাহান আলী আমার মামা। আমি মাসে একবার পাম্পে যাই। বালিয়াডাঙ্গিতে আমাদের আরেকটি পাম্প আছে। সেখানে সকল কাগজ পত্র আছে। ভেজাল তেল বিক্রি করা হয়না। যারা অভিযোগ করেছেন তারা মিথ্যা বলেছেন।
   
উপজেলা বিএনপির নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী জানান, ওই পাম্পের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তবে ভেজাল জ্বালানী তেলে আটোয়ারী উপজেলা সয়লাব হয়ে উঠেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুজ্জামান বলেন, পাম্পটির ব্যাপারে আমরা তদন্ত করবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরটিভি/এএএ  

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission