ইউরোপে উন্নত জীবনের স্বপ্নে নিস্ব ১৪ পরিবার, দালালের খপ্পরে নিখোঁজ যুবকরা

মাদারীপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ০২:০৭ পিএম


ইউরোপে উন্নত জীবনের স্বপ্নে নিঃস্ব ১৪ পরিবার, দালালের খপ্পরে নিখোঁজ যুবকরা
ছবি: আরটিভি

উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন দেশের অনেক তরুণ। তবে এই স্বপ্ন অনেক সময় রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নে দালালের খপ্পরে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ১৪ যুবক। পাঁচ মাস ধরে তাদের কোনো খোঁজ নেই। পরিবার জানে না- সন্তান বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মানবপাচার চক্রের হোতা হিসেবে পরিচিত বাজিতপুর গ্রামের মৃত আয়নাল হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদার প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে ইতালি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেন।পরবর্তীতে লিবিয়ায় পৌঁছে তাদের জিম্মি করে আদায় করেন আরও ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তার স্ত্রী চুন্নু বেগম এবং দুই মেয়ে সোনিয়া ও শশি আক্তার।

প্রায় এক বছর আগে ভাগ্য বদলানোর আশায় ইউরোপ পাড়ি জমায় ১৪ জন যুবক।তবে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর দালালের মাধ্যমে তারা পড়ে যায় ভয়ংকর মাফিয়া গোষ্ঠীর হাতে। শুরু হয় নির্যাতন—দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ।মুক্তির আশায় পরিবারগুলো বিক্রি করেছে ভিটেমাটি, নিয়েছে চড়া সুদের ঋণ। কিন্তু আজও খোঁজ মেলেনি প্রিয়জনের।

বিজ্ঞাপন

নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন, রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে সালমান বেপারী এবং চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার। একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায় এবং নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসীর ছেলে খলিল খালাসী, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, জলিল বয়াতীর ছেলে আল-আমিন বয়াতী এবং সিদ্দিকুর রহমান ঘরামীর ছেলে আলী ঘরামী সবাই একই দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে নিখোঁজ হয়ে পড়েছেন।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের দাবি, তারা যেন দ্রুত তাদের প্রিয়জনদের খোঁজ পান এবং এই মানবপাচারের ঘটনার বিচার হয়।

নিখোঁজ ইমরান সরদারের বাবা সমচু সরদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবুল হাওলাদার জোর করে ছেলের পাসপোর্ট নিয়ে নেয় ইতালী পাঠানোর কথা বলে। এরপর একে একে আমি ৩৬ লাখ টাকা দিয়েছি। প্রথমে ১৬ লাখ, এরপর ৫ লাখ, শেষে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে আরও ১৫ লাখ টাকা নেয়। এখন আমার ছেলে কোথায় আছে তাও জানি না।’ 

বিজ্ঞাপন

নিখোঁজ সাজ্জাদ বয়াতির বাবা মজিবুর বয়াতি বলেন, ‘বাবুল, তার স্ত্রী চুন্নু বেগম, এবং মেয়ে সোনিয়া ও শশী এই চারজন মিলে আমার কাছ থেকে মোট ৫৫ লাখ টাকা নেয়। একবার ২০ লাখ, তারপর ১৫, পরে আবার ২০ লাখ টাকা। লিবিয়ায় আমার ছেলেকে বন্দি করে নির্যাতন করে টাকা আদায় করেছে।’

বিজ্ঞাপন

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, ‘নিখোঁজ স্বজনদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে এ ধরনের বিপজ্জনক পথে পাড়ি না দিতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এ ঘটনার পর পুরো বাজিতপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় নেমে এসেছে শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভের ছায়া। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, যেন দ্রুত নিখোঁজ যুবকদের খোঁজ মেলে এবং এই মানবপাচার চক্রের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়।

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission