বিনা বিচারে ৩০ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন কানু মিয়া

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ০৭:২২ পিএম


বিনা বিচারে ৩০ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন কানু মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

কোনো ধরনের সাজা ছাড়াই ৩০ বছর হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলেন কানু মিয়া (৫০)। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মাকে হত্যা মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন। দুই দশক আগে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করলেও কানু মিয়া মুক্তি পাননি। 

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার নজরে আসে। পরে তাদের সহায়তায় ও আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কানু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রাম গ্রামে। তার বাবা মৃত চিনি মিয়া।

আজ দুপুরে তাকে কারাগার থেকে নিতে আসেন বড় দুই ভাই। এ সময় কানু মিয়া কোনো কথা বলেননি। 

বিজ্ঞাপন

স্বজন, কারাগার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানু মিয়া মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালের ২৫ মে তার মাকে ঘরে থাকা একটি কোদাল দিয়ে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তখন গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ঘটনায় কানু মিয়ার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা চলাকালে কানু মিয়া আরও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০০৩ সালের দিকে আদালত এক আদেশে বলেন, কানু মিয়া সুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। সেই থেকে কারাগারে আছেন কানু মিয়া। প্রথমে ভাই ও স্বজনেরা তাকে দেখতে গেলেও পরে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। স্বজনদের ধারণা হয়, হয়তো কানু মিয়া আর বেঁচে নেই।

সম্প্রতি জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন কারাগার পরিদর্শনে গেলে কানু মিয়া তার নজরে আসে। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মাকে হত্যার অভিযোগে তিনি কারাগারে আছেন। কিন্তু তার মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত। এমনকি মামলার বাদীরও কোনো সন্ধান নেই। পরে কানু মিয়ার ভাই নাসু মিয়ার খোঁজ পান আব্বাছ উদ্দিন। পরে সবকিছু বিস্তারিত জেনে লিগ্যাল এইড থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

গতকাল সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কানু মিয়ার জামিনের আবেদন করেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী। এ সময় জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর আজ দুপুর ১২টায় জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান কানু মিয়া। এ সময় তাকে গোলাপি রঙের একটি নতুন পাঞ্জাবি, সাদা টুপি ও একটি প্যান্ট পরে কারাগারের ফটক দিয়ে বের হতে দেখা যায়। তবে তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

বিজ্ঞাপন

কানু মিয়ার মুক্তির খবর পেয়ে বড় দুই ভাই মামলার বাদী মুনু মিয়া ও নাসু মিয়া কারা ফটকে আসেন। ভাইকে পেয়ে তারা জড়িয়ে ধরেন। তবে কানু মিয়া ছিলেন নির্বাক।

বিজ্ঞাপন

নাসু মিয়া বলেন, আমরা ধরে নিয়েছিলাম, আমাদের ভাই হয়তো আর বেঁচে নেই। যে কারণে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারিনি। আজ ৩০ বছর পর ভাই কারামুক্ত হয়েছেন। ভাইকে পেয়ে আমরা খুশি। আজই আমরা বাড়িতে যাব।

জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী মরলী ধর বলেন, এটি অত্যন্ত অমানবিক একটি ঘটনা। কোনো ধরনের বিচার ছাড়া একজন মানুষকে ৩০ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। অথচ এটি কারও নজরে এল না। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার নজরে আসায় আজ এই অসহায় মানুষটি কারামুক্ত হলো। মানুষটার ৩০ বছর কেউ কী ফিরিয়ে দিতে পারবে?’

হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. মনির চৌধুরী বলেন, কানু মিয়া ৩০ বছর ২ মাস ১৬ দিন পর আজ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়েছেন। তার বিষয়টি আগে কয়েকবার তারা আদালতের নজরের আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে এগোয়নি।

আরটিভি/এমএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission