সবাই বলে, দুইটা বাচ্চা বেচে দিতে, একটা রেখে দেই। কিন্তু মা হয়ে কি বেচতে পারি?— কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ২০ বছর বয়সী নাছিমা আক্তার। শেরপুর সদরের এক ভাঙা ঘরে, এক মাস আগে জন্ম নেওয়া তিন নবজাতককে কোলে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
গত ১৪ জুন শেরপুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একসঙ্গে দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন নাছিমা। চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। এই অর্থ জোগাড় করতে স্বামী লিখন মিয়া ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। নবজাতকদের খাবার, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে মা ও শিশু তিনজনই বর্তমানে সংকটে রয়েছেন।
নাছিমার স্বামী লিখন মিয়া পেশায় রিকশাচালক। পরিবারের খরচ ও ঋণ শোধের জন্য সন্তানদের রেখে তিনি আবার ঢাকায় কাজে চলে গেছেন। তাদের নিজ বাড়িতে থাকার জায়গাও না থাকায় বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন লিখনের বড় ভাই খোকনের ঘরে। খোকন একজন গার্মেন্টসকর্মী।
শিশুদের দাদি খোরশেদা বেগম বলেন, খাওয়ার অভাবে বাচ্চাগুলা শুকায়ে গেছে। মায়াও পুষ্টিহীনতায় ভুগতেছে। ওষুধ কিনতে পারি না, কিছুই করতে পারি না।
শিশুদের দাদা বলেন, আল্লাহ তিনটা বাচ্চা দিছে, কিন্তু খরচ তো কেউ দেয় নাই। ছেলে ঢাকা গেছে টেহা কামাইতে, এইদিকে পুলাপান না খাইয়া আছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, এদের মতো দরিদ্র পরিবারে তিন সন্তান যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুগুলোর যত্নে ঘাটতি হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা না এলে পরিবারটির পক্ষে শিশুগুলোকে বাঁচানো কঠিন হবে।
শেরপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, শিশুদের লালনপালনের জন্য আমাদের শেল্টার হোম রয়েছে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরটিভি/এএএ