হাতিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ত্রুটি, লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি

ইসমাইল হোসন কিরন

রোববার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১১:০৪ এএম


হাতিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ত্রুটি, বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি
ছবি: আরটিভি

নোয়াখালী হাতিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ইঞ্জিনের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার এই সময়েও লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বারবার। এতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা দুষছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগকে। কিন্তু উৎপাদনে সরকারি এই বিভাগের তদরাকির কোনো সুয়োগ নেই। যা রক্ষণাবেক্ষণ করছে দেশ এনার্জি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। 

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে সন্ধ্যার পর অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ ছিল। মাঝেমধ্যে এলেও ১০-১৫ মিনিট পর আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এটি হাতিয়া উপজেলা সদর ও চখালীর চিত্র। আবহাওয়া অনেকটা ভালো, ঝড় নেই বললে চলে। বজ্রপাতের কোনো আলামত নেই তবুও বিদ্যুৎ সরবারহ কেন বন্ধ হচ্ছে দেখতে অফিসে যান গ্রাহকদের কয়েকজন। তাতে দেখা যায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসটিও অন্ধকারে পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে মূল লাইনে বিদ্যুৎ সরবারহ নিরবচ্ছিন্ন না হওয়ায় লোডশেডিং ভোগতে হচ্ছে পুরো উপজেলাকে।

হাতিয়া দ্বীপে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিশ্চিত করতে সরকার ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় ১৬ একার জায়গায় এটি নির্মাণ করা হয়। দুই ধাপে বরাদ্দ দেওয়া ৬৬৮ কোটি ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের নাম ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন। সরকারি এই অর্থে শুধু সরবারহের কাজে ব্যয় করা হয়েছে। উৎপাদনে চুক্তি করা হয়েছে দেশ এনার্জি নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে। কিন্তু নতুন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ শেষ হতে না হতেই ত্রুটি দেখা দেওয়ায় হতাশ দ্বীপের বাসিন্দারা। 

বিজ্ঞাপন

হাতিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম (৫০) জানান, নতুন এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি পেয়ে এই দ্বীপের বাসিন্দারা অনেক খুশি হয়েছে। হঠাৎ এখানে কালো মেঘের ছায়া দেখা দিয়েছে। এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৫ দিন আগ থেকে লোডশেডিং বেপরোয়া। সকাল সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত সবসময় লোডশেডিং পড়তে হচ্ছে। এতে পরীক্ষার মধ্যে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখা মারাত্মকভাবে বিঘিত হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবারহ সঠিক ভাবে দেওয়া যাচ্ছে না। একসময় মানুষ মনে করতো বিদ্যুতের কর্মকর্তারা সরবারহ বন্ধ রেখে জ্বালানি তেল বাঁচিয়ে তা বিক্রি করে অবৈধ টাকা উপার্জন করতো। এখন সেই সুযোগ নেই। কারণ উৎপাদনের বিষয়টা সম্পূর্ণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়। 

২০২১ সালে শুরু হওয়া এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু করে। এতে মানুষের মধ্য ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে। হঠাৎ করে বেপরোয়া লোডশেডিং অনেকে সোশাল মিডিয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়। কেউ কেউ এই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে অভিযুক্ত করছেন। 

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

এই বিষয়ে হাতিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, গ্রাহকরা এখনো ইঞ্জিন বন্দ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে অভিযুক্ত করেন। যা মোটেও সঠিক নয়। উৎপাদন সম্পূর্ণ দেশ এনার্জি কোম্পানির বিষয়। আমরা তাদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি। তারা তাদের মতো করে ইঞ্জিন বন্ধ করে আবার চালু করে। এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ না পেলে গ্রাহক আমাদেরকে গালি দেয়। গত কয়েকদিন ইঞ্জিনের ত্রুটির কথা বলে তারা বারবার বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রেখেছে। যাতে মানুষজন আমাদেরকে অপমানিত করে। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের অফিসে আসেন, তারা আমাদের অফিসটিও অন্ধকারে দেখে শান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন প্রকল্পের শুরুতে দেশ এনার্জির সঙ্গে ৫ হাজার কিলোওয়ার্ডের চুক্তি করা হয়েছে। তখন গ্রাহকের চাহিদা ছিল মাত্র একহাজার থেকে একহাজার পাঁচশত কিলোওয়ার্ডের। অথচ তারা সরকার থেকে ৫ হাজার কিলোওয়ার্ডের চার্জ নিতেন। এখন গ্রাহক বেড়েছে। চাহিদা ৫হাজার কিলোওয়ার্ডের চেয়ে বেশি। এতে তারা অতিরিক্ত লোড এর কথা বলে বারবার ইঞ্জিন বন্ধ করছে। 

এই বিষয়ে দেশ এনার্জি কোম্পানির হাতিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মাহফুজ রহমান বলেন, ইঞ্জিনের ত্রুটি থাকতেই পারে। গত কয়েকদিন আমাদের জ্বালানি তেলের সংকট ছিল। এখন জ্বালানি তেল এসেছে। এ ছাড়া একটি ইঞ্জিনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। যা দু-এক দিনের মধ্যে মেরামত হয়ে যাবে। তবে লোডশেডিং সম্পূর্ণ তাদের কারণে হয় না বলে জানান তিনি।

আরটিভি/এএএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission