জলোচ্ছ্বাসে বেহাল সড়ক, নিঝুমদ্বীপে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের দুর্ভোগ

ইসমাইল হোসন কিরন

বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০২:১৩ পিএম


জলোচ্ছ্বাসে বেহাল সড়ক, নিঝুমদ্বীপে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের দুর্ভোগ
ছবি : আরটিভি

জোয়ারের তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে পাকা সড়কের অনেকাংশ। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। ১০ কিলোমিটার পুরো সড়ক বেহাল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে নোয়াখালী হাতিয়ার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দারা। যার ফলে আসছে শীতে পর্যটক সংকটে অর্থনৈতিক ভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। 

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, নিঝুমদ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় অনেকগুলো ব্রিজ কালভার্ট রয়েছে। অব্যাহত সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের প্রবল স্রোতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির ওপর দিয়ে গড়িয়েছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো কাজ না হওয়ায় সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুরো সড়কটির ধ্বংস চিত্র যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। 

বিজ্ঞাপন

নিঝুমদ্বীপ নামার বাজার থেকে বন্দরটিলা রুটে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করে সুলতান আহাম্মেদ। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোঁয়াখালি এলাকার ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। এতে নামার বাজার থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা একটি কাঠের ব্রিজ তৈরি করে তা দিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু সেই ব্রিজও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

সুলতান আরও জানান,  নিঝুমদ্বীপ ভ্রমণে আসা পর্যটকরা এই রাস্তা দিয়ে নামার বাজার যান। নামার বাজার হলো বিচ এলাকা ও থাকার জন্য হোটেল জোন। কিন্তু প্রধান সড়কের এই অবস্থা পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি করছে। 

প্রধান সড়কের বন্দরটিলা বাজারের দক্ষিণ পাশে আরও একটি ব্রিজ ভেঙে পড়তে দেখা যায়। স্থানীয়রা তার পাশ দিয়ে বিকল্প সড়ক তৈরি করে চলাচল করছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিকদের।

বিজ্ঞাপন

টমটম (মালামাল পরিবহনের ছোট গাড়ি) গাড়ীর মালিক জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন ভাঙা ব্রিজের এই পাশে মালামাল গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায় বহন করে অপর প্রান্তে নিতে হয়। ভাঙা ব্রিজের পাশ দিয়ে তৈরি বিকল্প সড়ক দিয়ে খালি গাড়ি পার করতেও অনেক কষ্ট হয়। এতে অধিক সময় ও অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বন্দর টিলা বাজারের পল্লী চিকিৎসক বেলাল উদ্দিন বলেন, গত দশ বছর সড়কটির এই অবস্থা। অনেক জায়গায় সড়কের অংশ ভেঙে খালে পড়ে আছে। ১০ কিলোমিটার পুরো রাস্তাটি সিসি ঢালাই। কিন্তু গত কয়েক বছর অস্বাভাবিক জোয়ারের রাস্তার ওপর দিয়ে পানি গড়িয়েছে। এতে অনেক জায়গায় পাকা অংশ উঠে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। দু-একটি রিকশা ও সিএনজি চলাচল করছে তাও ঝাঁকুনির কারণে বসে থাকা যায় না। রোগী ও গর্ভবতী মায়েদের চলাচল একেবারেই করা যায় না।

নিঝুমদ্বীপ নামার বাজার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহীম বলেন, প্রধান সড়কের দুরবস্থার কারণে পর্যটকদের নিঝুমদ্বীপে ভ্রমণ অনেক কমে গেছে। পুরো রাস্তায় গর্ত, গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নেই। মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। চলাচলে ভোগান্তির মাত্রা জানতে পেরে ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে পর্যটকদের আনাগোনা। এ বছরও যদি গতবারের মত পরিস্থিতি হয় তাহলে ব্যবসা ধরে রাখা যাবে না। 

তিনি আরও বলেন, মোক্তারিয়া ঘাট থেকে জাহাজমারা পর্যন্ত রাস্তা এবং নিঝুমদ্বীপ ১০ কিলোমিটার রাস্তা অতি দ্রুত কাজ না করলে পর্যটন সম্ভাবনাময় নিঝুমদ্বীপের নাম মুছে যাবে। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, জনদুর্ভোগ দূরীকরণে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।

হাতিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, নিঝুমদ্বীপে ৪৫ মিটারের একটি ব্রিজ ও ২টি কালভার্ট ধসে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হলেও সাময়িকভাবে বিকল্প রাস্তা করে মোটামুটি সংযোগ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নিঝুমদ্বীপের প্রধান সড়কের উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

আরটিভি/এএএ/এআর 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission