ঘরের সবকিছু ভেসে গেছে জোয়ারের পানিতে, চারটি টিনের চালের মধ্যে একটি কোনো মতে ধরে রেখেছেন। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের মধ্যে অধিকাংশই ভেসে গেছে, ঘরে পুরুষ সদস্য কেউ না থাকায় প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখেছেন সে। এখন কোনো মতে মাটির ওপর দোচালার মতো করে বসবাস করছেন। আলাপকালে এসব কথা বলেন ষাটোর্ধ বাতাশী বেগম। তার বাড়ি নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে মাইজচা মার্কেট এলাকায়।
রোববার (৩০ মে) সকালে সংবাদকর্মীদের দেখে দাঁড়িয়ে থাকা বাতাশী এগিয়ে এসে বুধবার (২৬ মে) অস্বাভাবিক জোয়ারের বর্ণনা দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। বর্তমানে বেড়িবাঁধের ভিতরে অন্যের জায়গায় কোনোমতে বসবাসের স্থান হয়েছে তার। স্বামী মারা গেছে ৭ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। ১১ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কোনোরকম দিনমজুর করে সংসার চলে তার। এখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই করছেন বলেও জানান তিনি।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সোনদিয়া ইউনিয়নের হোইকবাধা গ্রামে অনেকে জোয়ারের স্রোতে ভেসে যাওয়া ঘরের আসবাবপত্র মেরামত করছে। তার পাশেই রাস্তার উপর ভাঙা খাটের উপরে তীব্র তাপদাহ থেকে বাচতে ছাউনি দিয়ে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে বসে আছে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। তিনি জানায়, বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ছিঁড়ে গিয়ে বসবাসের ঘরটিও ভেসে গেছে। জোয়ারে পানি কমে গেলেও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় জিনিসপত্র কুড়িয়ে এনে রাস্তার উপর রেখেছে। গত চারদিন এভাবে রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাননি। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কোনো সদস্য এসে খবর নেয়নি। বর্তামানে দ্বিতীয় সংসারের ছোট ছোট চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে তার সংসার।
হাতিয়াতে লোনা বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়েছে কিছুদিন পূর্বে। প্রতিবছর বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ার পরপরই যাদের বাড়ি ঘর বাঁধের বাইরে পড়ে যায় তারা পর্যায়ক্রমে বাঁধের ভিতরে বা ডালে বাড়ি-ঘর স্থানান্তর করে। এ বছর সেই সময়টুকু পায়নি অনেকে। বাড়ি-ঘর স্থানান্তর করার পূর্ব মুহূর্তে অস্বাভাবিক জোয়ারে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার (২৬ মে) অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলার হরনী, চানন্দী, তমরদ্দি, সোনাদিয়া, চরকিং, চরঈশ্বর ও নিঝুমদ্বীপসহ ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। হাতিয়াতে বেড়িবাঁধের অন্তত ১৩টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নিঝুমদ্বীপে। এই ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড ৪-৫ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। জোয়ারের স্রোতে ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক।
এসআর/