ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন কলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যখন জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তখন আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) এর রেসকিউ টিম। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার তৎপরতায় তাঁরা যা করেছেন, তা নিঃসন্দেহে এক নিঃশব্দ মানবিক ইতিহাস।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরপরই মো. রকিবুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল জিহাদ, সিয়াম সাদিক ও জাহিদ রেজানুর ঘটনাস্থলে ছুটে যান—ফায়ার সার্ভিস বা সেনাবাহিনীর আগেই। তাঁরা স্থানীয়দের সহায়তায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে আগুন নেভাতে সহায়তা করেন এবং পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে উদ্ধারকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
এই উদ্ধার অভিযানে তাঁরা প্রায় ৪০ জনের বেশি আহত ও মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধারকৃত শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য লুবানা জেনারেল হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন তাঁরা।
এদিকে, হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে রেসকিউ টিমের আরেকটি ইউনিট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে হতাহতদের তথ্য সংগ্রহ এবং রক্তদাতাদের সমন্বয়ের কাজে নিয়োজিত হয়। উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে রক্তদানে ইচ্ছুকদের সমন্বয় করেন নাকিবুর রহমান, আব্দুল ওহাব ও মো. মুস্তাকিম।
পরিস্থিতি যখন আরও জটিল হয়ে ওঠে, তখন আপ বাংলাদেশ-এর রেসকিউ টিম জরুরি প্রবেশপথ খোলা রাখা, হিউম্যান চেইন গঠন, মেইন রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
রক্তদানের আগ্রহীদের তথ্য সংরক্ষণ ও সংগঠনের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ জন রক্তদাতাকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহনের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। এ কার্যক্রম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন নাকিবুর রহমান, আব্দুল ওহাব ও মো. মুস্তাকিম।
ঢাকা মেডিকেলের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সঙ্গে সমন্বয় করেন সাজ্জাদ সাব্বির, আর বার্ন ইউনিটে সারা দুপুর থেকে অবস্থান করে রক্তদাতাদের তথ্য ও চিকিৎসাসেবা তদারকি করেন সাদমান আলম।
এছাড়া, দুর্ঘটনার সময় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে সন্তানদের খুঁজে না পাওয়া প্রায় ২০–২৫ জন অভিভাবকের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সন্তানদের সন্ধানে নিরলসভাবে সহযোগিতা করেছে আপ বাংলাদেশের টিম।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) এর মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা বলেন, বিমান দুর্ঘটনার দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আপ বাংলাদেশ-এর রেসকিউ টিম তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমাদের টিম নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে—নিরব, নিবেদিত এবং মানবিক এক ইতিহাস নির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে।
আরটিভি/এমকে