অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল।
সিলেটে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সিলেট জেলার আট উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এখানে বন্ধ ঘোষণা হয়েছে প্রায় ২শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অপরিবর্তিত রয়েছে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
মৌলভীবাজারে ৫টি উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি লাখো মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ বালাই। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এখানকার খেটে খাওয়া মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। জেলার ২৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ জেলায় ৩য় দফা বন্যায় ৫টি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। বসত ঘরের ভেতরেও উঠে গেছে পানি। বাধ্য হয়ে ময়লা-নোংরা পানির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে। বন্যায় ভেঙ্গে গেছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ডুবে গেছে নলকূপ। ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। এ অবস্থায় চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গত এলাকায়। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
তৃতীয় দফার বন্যা দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যাপ্ত মেডিক্যাল টিম বা ওষুধপত্র না পৌঁছানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে জেলা সিভিল সার্জন জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ৬৭টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেরপুরে ১৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে সময় লাগবে বলেও জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে, প্রবল বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া ও রামুসহ জেলার অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ।
মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ।
চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের চকরিয়ার বাটাখালী পয়েন্টে সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চিরিঙ্গা-কাকারা-মাঝেরফাঁড়ি সড়কের প্রপার কাকারা পয়েন্টের সড়কের বিশাল অংশ নদীতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়কের ওপর দিয়ে লোকজন নৌকায় করে যাতায়াত করছে।
চকরিয়ায় মাতামুহুরীর নদীর উভয়পাশে উপজেলার অন্তত ১৭টি ইউনিয়ন ডুবে গেছে। এতে অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বাঁকখালী নদীর উভয়পাশে রামু উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পেকুয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাকবলিত মানুষ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সবাই নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বন্যা কবলিত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, রাজধানীতে দু’দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। পানি পার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে ব্যাহত হয় যান চলাচল। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
ফলে বুধবার সকাল থেকে কর্মমুখী মানুষদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। ঢাকার মতিঝিল, শান্তিনগর, আরামবাগ, মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, তেস্তুরী বাজারসহ বিভিন্ন জায়গার প্রধান সড়কে পানি জমে যায়। ফলে পুরো নগরে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট ও পরিবহন সংকট।
দেশের ৯০টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানির উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সুরমা, কুশিয়ারা, হালদা ও মাতামুহুরী নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে।
জেএইচ