বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা সাহিত্যের এই উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।
উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, চলচ্চিত্র ও গান—সৃজনশীলতার প্রায় প্রতিটি শাখায়ই অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন তিনি। তার লেখা চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে বাঙালির হৃদয়ে।
বর্ষা ছিল হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় ঋতু। তার সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছে বর্ষার বন্দনা। ১৩ বছর আগে এমনই এক বর্ষণমুখর দিনে তিনি বিদায় নেন পৃথিবী থেকে, যেন নিজেই বর্ষার সঙ্গে মিশে যান।
রসায়নের কঠিন বিষয় পড়ালেখা করলেও তার লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে সহজ-সরল মানুষের জীবন, প্রকৃতি আর আবেগের রঙিন চিত্র। সৃষ্টি করেছেন হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই, রূপা প্রমুখ জনপ্রিয় চরিত্র, যাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে আলাদা পাঠক-ভুবন।
বাংলা সাহিত্যে বিজ্ঞানের কল্পনা নিয়ে লিখেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। তার নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্র আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই পাঠকমহলে সাড়া ফেলেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর একে একে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘দূরে কোথাও’, ‘ফেরা’ ইত্যাদি কালজয়ী রচনার মধ্য দিয়ে জয় করে নেন সব বয়স ও শ্রেণির পাঠকের হৃদয়।
তার সাহিত্যকর্ম আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে, পাঠকের হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আজ নেত্রকোনা ও গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে দিনভর নানা আয়োজন রয়েছে। প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছেন তার অগণিত পাঠক ও অনুরাগীরা।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪)।
হুমায়ূন আহমেদের ডাকনাম ছিল ‘কাজল’। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা; মা আয়েশা ফয়েজ একজন গৃহিণী। তিনি তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। তার ছোট ভাই অধ্যাপক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব একজন খ্যাতিমান কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
আরটিভি/টিআই