images

তথ্যপ্রযুক্তি

তরুণদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এখন ভয়ংকর ফাঁদ

শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫ , ০৮:১৫ পিএম

সোশ্যাল মিডিয়ার অসুস্থ সৌন্দর্য চর্চা তরুণদের ঠেলে দিচ্ছে খাদ্যজনিত মানসিক রোগের দিকে। রোগা হওয়াকে প্রশংসিত করে, ইনফ্লুয়েন্সারদের ছড়ানো ভুল তথ্য তরুণ-তরুণীদের ভয়ংকর খাদ্যাভ্যাসে উদ্বুদ্ধ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে করে অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়া ও অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এই দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া এখনই জরুরি।

এএফপি ও বাসস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে যেখানে বিশ্বে ৩.৫% মানুষ খাওয়ার সমস্যায় ভুগত, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৮ শতাংশে। গবেষকরা মনে করছেন, এই সময়েই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। টিকটক, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে তথাকথিত ‘ডায়েট কোচ’ ও ইনফ্লুয়েন্সাররা বিপজ্জনক পরামর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ফ্রান্সের পুষ্টিবিদ ক্যারোল কপ্তি জানান, খাদ্যাভ্যাসজনিত রোগে আক্রান্তদের আত্মবিশ্বাস কম থাকে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় রোগা হওয়ার জন্য তারা যেভাবে লাইক ও ফলো পায়, তাতে ভুল ধারণা আরও গেঁথে যায়।

স্টুডেন্ট হেলথ ফাউন্ডেশনের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাটালি গোডার্ট বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের ‘চিকন’ হওয়া, কঠোর ডায়েট এবং অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি উৎসাহিত করছে, যা মানসিকভাবে দুর্বল তরুণদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

মারণ ট্রেন্ড: #স্কিনিটক
টিকটকে জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ #SkinnyTok-এ ছড়ানো হয় ভয়ংকর ডায়েট পরামর্শ। এতে কিশোরীদের উৎসাহিত করা হয় অত্যন্ত কম খেতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে, যেমন—ওজন কমানোর ওষুধ খাওয়া, ইচ্ছাকৃত বমি করা ইত্যাদি।

ফরাসি নার্স শার্লিন বুইগ বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া যেন খাওয়ার সমস্যার দরজা খুলে দিচ্ছে। সেখানে অ্যানোরেক্সিয়ায় ভোগা তরুণীরা নিজের শীর্ণ দেহ দেখিয়ে ‘স্বাভাবিকতা’র প্রচার করছে, যা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার বদলে বিষ হয়ে উঠছে।”

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
. হৃদরোগ
. সন্তান ধারণে জটিলতা
. আত্মহত্যার প্রবণতা

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার অ্যানোরেক্সিয়া আক্রান্তদের মধ্যেই দেখা যায়। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে, ১৫-২৪ বছর বয়সীদের অকাল মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা।

ভিউয়ের বিনিময়ে বাঁচার চেষ্টা: ক্যাপটি জানান, এক তরুণী নিয়মিত টিকটকে নিজের বমি করার ভিডিও লাইভ করে অর্থ উপার্জন করে এবং সেই টাকায় খাবার কেনে। এ যেন এক দুঃস্বপ্নে বন্দি জীবন।

ভুয়া ‘ডায়েট কোচ’ ও চিকিৎসাবিরোধী পরামর্শ: গোডার্ট বলেন, অনলাইনে যারা নিজেদের ডায়েট কোচ বলে দাবি করছে, তারা বিপজ্জনক, অযৌক্তিক ও অবৈধ পরামর্শ দিচ্ছে। অথচ সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ভরযোগ্য পরামর্শ গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সমাধান কী?
নার্স বুইগ টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে এসব কনটেন্ট নিয়মিত রিপোর্ট করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, “আমি রোগীদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করার পরামর্শ দিই। যদিও এটা কঠিন, কিন্তু অন্য কোনো উপায়ও নেই।”

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়েট অনুসরণ না করা

. সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব থেকে দূরে থাকা

. ডায়েট কোচদের যাচাই করা

. পরিবারের নজরদারি ও মানসিক সহায়তা

আরও পড়ুন
google

আর নয় দোকানে দৌড়ঝাঁপ, গুগল নিয়ে এলো ভার্চুয়াল পোশাক ট্রায়াল 

তরুণ সমাজকে রক্ষায় এখনই প্রয়োজন সোশ্যাল মিডিয়া সচেতনতা, স্কুল-কলেজে কাউন্সেলিং ও পরিবারভিত্তিক নজরদারি। না হলে এই ‘ডিজিটাল রোগ’ এক ভয়ংকর মহামারিতে রূপ নিতে পারে।

আরটিভি/এসকে/এআর