মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ০২:৩৩ পিএম
১৪ বছরের সায়ান ইউসুফ। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। তার বাবা এ এফ এম ইউসুফ ও মা শামীমা শাম্মী একই কলেজের রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক। ছেলে মেধাবী হওয়ায় মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার্থে ছেলেকে আমেরিকায় পাঠাবেন। একসময় বিমানে করে আমেরিকায় পাঠিয়ে উচ্চশিক্ষায় পাঠানোর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই ধুলিস্যাৎ করে দিল ঘাতক বিমান। একমাত্র ছেলে অকালে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সায়ানের বাবা-মা। ছেলেকে ঘিরে স্বপ্নগুলো ছাই হয়ে সব উড়ে গেছে তাসের ঘরের মতো।
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে সোমবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সায়ান। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
নিহত সায়ান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়ির সন্তান। তার বাবা এ এফ এম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মা শামীমা শাম্মী মাইলস্টোন স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষিকা। তারা উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ভাড়া থাকতেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে সায়ানদের বশিকপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন নামে ডেকে ডেকে নাতি সায়ানের জন্য বিলাপ করছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। বাড়ির উঠোনে একে একে এসে জড়ো হচ্ছেন প্রতিবেশীরা। সবার মন ভারাক্রান্ত। একেকজন একেকভাবে কষ্ট প্রকাশ করছেন। তবে কেউই তার এই আকস্মিক মৃত্যু সহজে মেনে নিতে পারছেননা।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে একটি লাশবাহী এম্বুলেন্সে সায়ানের মরদেহ বশিকপুরের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বিকেল ৩টায় বশিকপুরের গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে সায়ানের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাদা মাকছুদ ডাক্তারের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
সায়ানের বাবা এ এফ এম ইউসুফ কান্নজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছিল। এদেশে জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা এদেশে আর থাকবো না। এদেশের পলিটিসিয়ানরা পরিবেশকে পলিউট করে ফেলেছে।
সায়ানের বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতিবেশী মিজানুর রহমান বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমার বন্ধুর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সায়ানকে আমেরিকায় পাঠানোর স্বপ্ন ছিল পরিবারের। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলোনা।
সায়ানের দাদী কামরুন্নাহার আমার মনু বলে বলে বিলাপ করছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, একই ঘটনায় সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়ন সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে আফনান ফায়াজও মারা যায়। তাকে সকালে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। আফনানও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার মরদেহ ঢাকাতেই দাফন করা হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আরটিভি/এমকে